বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এবার সম্পদে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। সম্পদের হিসাবে এর পরের অবস্থান জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের।
অপরদিকে শিক্ষার দিক থেকে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করীম। ফয়জুল করীমের নামে থাকা ৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ইকবাল হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে থাকা দুটি মামলায় স্থগিতাদেশ রয়েছে।
রোববার বরিশাল নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত, পেশায় ব্যবসায়ী। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি ৭১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৬ টাকা। এর মধ্যে নিজ নামে নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা ও স্ত্রীর নামে নগদ রয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫ টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমাকৃত অর্থের পরিমাণ নিজ নামে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১২ হাজার ৩৯৭ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার মূল্য ২০ লাখ টাকা। খোকনের নিজের নামে ৩২ লাখ টাকা মূল্যের ১টি গাড়ি ও স্ত্রীর নামে ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের ১টি গাড়ি রয়েছে।
খোকন ও তার স্ত্রীর নামে উপহার স্বরূপ পাওয়া মোট ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। তাদের দুজনের নামে থাকা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর মোট মূল্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৫ লাখ ৪ হাজার টাকার। দুটি লাইসেন্সকৃত পিস্তল রয়েছে খোকনের।
এছাড়া ও খোকনের নামে খুলনায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৪ তলা ভবন, রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ও একেকটি ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ৬টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে উত্তরায়। তার বার্ষিক আয় অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা, যৌথ ব্যবসায় লভ্যাংশ ১ হাজার ৬৭২ টাকা ও ব্যাংক আমানত ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা।
ইকবাল হোসেন তাপস
জাতীয় পার্টি মনোনীত এই মেয়র প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগত্য বিএসসি। পেশায় ব্যবসায়ী। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগদ অর্থ রয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ২২৪ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০ লাখ টাকা। নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ৭৩ হাজার টাকা, শেয়ার রয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার, মেডিক্যাল কলেজে শেয়ার ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, প্রোপার্টি শেয়ার ১৫ লাখ টাকা ও ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের মোটরগাড়ি রয়েছে তাপসের।
৬০ তোলা অলংকার, ৫ তলা ভবন ও দশমিক ৪৪২৪ একর কৃষি জমির মালিক হলেও তাপস এর মূল্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এছাড়া তাপসের গৃহ সংস্কারের ঋণ রয়েছে ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৫ টাকা। তার বার্ষিক আয় ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বেতন-ভাতা থেকে আয় ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৭ টাকা ও সঞ্চয়ী আমানতের মুনাফা ১ হাজার ১৯৬ টাকা।
কামরুল আহসান রুপন
এমএসএস পাস কামরুল আহসান রুপন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে। স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর নগদ রয়েছে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৫ টাকা, ব্যাংকে জমা ১২ হাজার ১৬৫ টাকা, শেয়ার বাজারে রয়েছে ১ কোটি টাকা।
রপনের ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি গাড়ি, ব্যবসায় পুঁজি ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৪৫ টাকা ও পিতাকে লোন ৫০ হাজার টাকা।
যৌথ মালিকানায় ১৬৫৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ ভাগের এক ভাগ রুপনের। তবে এর মূল্য হলফনামায় উল্লেখ নেই। বার্ষিক আয় ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫ টাকা ও ব্যাংক সুদ ১৯৩৬ টাকা। মা ও বোনের কাছ থেকে মোট ২৫ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে রুপনের।
সৈয়দ ফয়জুল করীম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর ফয়জুল করীম কামিল পাস। তার পেশা মুহাদ্দিস ও শিক্ষকতা। তার নগদ অর্থ ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৩ টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৬৯ টাকা।
কৃষি জমি রয়েছে ৮২৯ শতাংশ, দালান একটি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে দুটি। তবে হলফনামায় এই সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। তার বার্ষিক আয় অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ও শিক্ষকতা করে আয় ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা।
মিজানুর রহমান বাচ্চু
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু পেশায় ব্যবসায়ী। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ রয়েছে ৩ লাখ টাকা, ছেলের নামে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১টি প্রাইভেট কার ও ১টি মোটরসাইকেল, অলংকার ছেলের নামে ১০ ভরি ও স্ত্রীর নামে ৮ ভরি। বাচ্চুর ব্যবসার মূলধন ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৪শ’ টাকা। অকৃষি জমি নিজের নামে রয়েছে ২৩ শতাংশ, স্ত্রীর নামে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং যৌথ মালিকানায় ২১ শতাংশের ৩ ভাগের এক ভাগ।
তার বার্ষিক আয় বাড়িভাড়া দিয়ে ৬ লাখ ৬ হাজার ৯৮০ টাকা, দোকান ভাড়া থেকে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ টাকা ও ব্যবসা থেকে আয় ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা।
আলী হোসেন হাওলাদার
স্বশিক্ষিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আলী হোসেনের নগদ অর্থ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ১৮ লাখ টাকা। ট্রাক রয়েছে ২টি, মোটরগাড়ি ১টি, মোটরসাইকেল ২টি, অলংকার ১০ ভরি। দোকানঘর নির্মাণ কাজে বিনিয়োগ ৯ লাখ টাকা। কৃষি জমি রয়েছে ২ একর, অকৃষি জমি ৫৬ শতাংশ, একটি ভবন ও ৭ শতাংশ জমি।
আলী হোসেনের বার্ষিক আয় দোকান ভাড়া থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৩ টাকা। ব্যাংকে তার দেনা রয়েছে ৯ কোটি টাকা।