বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রাম্য সালিশে একঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরিবার

  •    
  • ১৯ মে, ২০২৩ ২১:৩৮

ভুক্তভোগী নাছিমা আক্তার বলেন, ‘চাকরির জন্য আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন। তাই বিচারের দিন আমরা কেউ বিচারে উপস্থিত ছিলাম না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের মাতুব্বরেরা আমাদের একঘরে করে দেন এবং রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেটের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন।

গ্রাম্য মাতুব্বরদের নির্দেশ অমান্য করে সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় মানিকগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েসহ মো. হানিফ কাজী নামে এক ব্যক্তির পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। এতে বাড়িঘর থাকতেও অন্যের বাড়িতে করে মানবেতর জীবনযাপন করছে ভুক্তোভোগী পরিবার।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আগকলিয়া এলাকায় বুধবার (১০মে) স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে ওই পরিবারকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দেয় স্থানীয় গ্রাম্য মাতুব্বররা।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামের মাতুব্বরসহ ১২ জনকে আসামী করে দৌলতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী হানিফ কাজীর স্ত্রী নাছিমা আক্তার।

অভিযুক্তরা হলেন দৌলতপুর উপজেলার আগকলিয়া এলাকার আব্দুল বাতেন কাজী, মো. হাসেম আলী, মো. মুক্তার হোসেন, মো. ফুলবাহার, মোসাম্মত মুক্তা, ইউনুস কাজী, পাষান কাজী, শামসুল কাজী, হাসান কাজী, হারেজ কাজী, নজরুল কাজী ও আনসার কাজী।

ভুক্তভোগীর বরাতে স্থানীয়রা জানান, বাতেন কাজীর পেশায় একজন অটোবাইক চালক। তার বড় ভাই হানিফ কাজী ঢাকায় চাকরি করেন। হানিফ কাজীর বাড়ির লোহার গেটের কারণে ছোট ভাই বাতেনের অটোবাইক বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারে না। এ বিষয়ে ঢাকায় চাকরিরত বড় ভাইকে বাড়ির লোহার গেট ভেঙে দিতে বলেন বাতেন। বেশ কয়েকবার বলার পরও ওই গেট না ভাঙায় বাতেন গ্রামের মাতুব্বরদের কাছে বিচার দেন। বাড়ির রাস্তা সমস্যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করতে মাতুব্বররা ঢাকায় চাকরি করা হানিফ কাজীকে ফোন করেন। ফোনালাপে বুধবার (১০ মে) সালিশের তারিখ ঠিক করে স্থানীয়ভাবে বসার ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু চাকরির জটিলতায় হানিফ ওইদিন গ্রামে সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের মাতুব্বররা হানিফ কাজী ও তার পরিবারকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। সে সঙ্গে হানিফ কাজীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের মিশতে নিষেধ করেন তার। হানিফ কাজীর পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনোকিছু ক্রয়-বিক্রয় করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধানও দেন মাতুব্বররা। সে সময় হানিফ কাজীর বাড়ির রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেটের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন তারা।

ভুক্তভোগী নাছিমা আক্তার বলেন, ‘চাকরির জন্য আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন। তাই বিচারের দিন আমরা কেউ বিচারে উপস্থিত ছিলাম না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের মাতুব্বর ইউনুস কাজী, পাষান কাজীসহ বিচারে আসা লোকজনেরা আমাদের একঘরে করে দেন এবং রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেটের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন।

‘বেড়া দেয়ার পর কয়েকদিন বাড়িতে ছিলাম। কিন্তু রান্নাঘর, বাথরুম ও টয়লেটে যেতে সমস্যা হওয়ায় এবং মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার কারণে বাধ্য হয়ে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিই। বর্তমানে সেখানে আছি এবং মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাম্য মাতুব্বরদের কাছে গিয়ে বেড়া খুলে দিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা না মানায় থানায় অভিযোগ করেছি। আশা করি আইনের মাধ্যমে আমি সঠিক বিচার পাবো।’

হানিফ কাজীর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে তামান্না ইসলাম বলে, ‘বেড়া দেয়ার পরও বেড়ার ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করে কষ্ট করে কয়েকদিন ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, বেড়ার ফাঁকাও বন্ধ করে দিয়েছে আর দোকানে গেলে দোকানদারও কথা বলে না; কিছু বিক্রিও করে না। পরে পরীক্ষা দিতে ও জীবন বাঁচাতে পরিচিত এক চাচার বাড়িতে আমি আর মা আশ্রয় নিয়েছি। ওই চাচার বাড়িতে থেকেই এখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি।’

অভিযুক্ত মাতুব্বর ইউনুস কাজী ও পাষান কাজী বলেন, ‘গ্রামের মাতুব্বরদের কথা অমান্য করায় হানিফ কাজীর পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। গ্রামে থাকলে গ্রামের মাতুব্বরদের কথা আগে শুনতে হবে, তারপর আইন মানতে হবে। এতে আইন অমান্য হলেও আমাদের কিছু করার নেই। দেখি হানিফ ও তার পরিবার আমাদের কী করতে পারে।’

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার বিকেলে উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে।’

ওই পরিবারকে একঘরে করার মাধ্যমে আইন অমান্য হয়েছে বলেও ওসি জানান।

এ বিভাগের আরো খবর