ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে জারি করা হয়েছে ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী মোখা শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে আসছে কক্সবাজারের দিকে। তবে এর বেশেষ প্রভাব পড়বে চট্টগ্রামেও।
ঘূর্ণিঝড় মোখাকে ঘিরে সম্ভ্যাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ১৪ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিটি ইউনিয়নে ১ টি ও উপজেলা পর্যায়ে ৫ টি সহ জেলায় ২৮৪ টি মেডিক্যাল টিম গঠন করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ‘জেলার দুই কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার (সিএসডি) এবং ১৬ টি স্থানীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারে (এলএসডি) মজুদকৃত খাদ্যশস্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তাছাড়া গুদামে পানি প্রবেশ ঠেকাতে প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা পুলিশের ১৭ টি থানায় কর্মরত ২ হাজার পুলিশ সদস্য প্রস্তত রাখা হয়েছে। তাছাড়া ঝড় পরবর্তী সময়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০৫ টি গেরিলা টিম।’
তাছাড়া ৫ লাখ ১ হাজার ১১০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৫৩০ টি স্থায়ী ও ৫০০ টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) ও ৮ হাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ফায়ার সার্ভিসের সরঞ্জাম সহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। মেডিক্যাল টিমসহ প্রস্তুত আছে নেভী ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী বোটও।
এছাড়া শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর জেলার উপকূলীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকার জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে নেওয়ার কাজ করে জেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিপিপি ও ইসপা।
পণ্য খালাস বন্ধ চট্টগ্রাম বন্দরে:
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পরিপ্রেক্ষিতে নিজস্ব ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ বা তার বেশি হলেই নিজেদের সর্বোচ্চ এই এলার্ট জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই এলার্ট জারি হলে বন্দরের সকল কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারওর পর বন্দরে নিজস্ব এলার্ট-৪ জারি করা হয়েছে। এলার্ট-৩ জারি হলেই ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জেটি থেকে পণ্যবাহী মাদার ভেসেলগুলো গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘জেটিতে ২০ টি জাহাজ ছিলো, সবগুলো গভীর সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গতকালই (শুক্রবার) লাইটার জাহাজগুলো কর্ণফুলীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এলার্ট-৪ জারির পর বন্দরে পণ্য খালাসসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।’