নরসিংদীর একটি টেক্সটাইল মিলে কর্মরত অবস্থায় এক চীনা প্রকৌশলী নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেছেন তার স্বজনরা। মরদেহ বুঝে নিতে এসে এই ক্ষতিপূরণের দাবিতে মিলের সামনে অবস্থান করছেন তারা।
ঘটনাটি ৩ মে ঘটলেও তা প্রকাশ্যে আসে শুক্রবার। রাত ১০টার দিকেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের স্বজনরা মিলের সামনে অবস্থান করছিলেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩ মে নরসিংদী সদরে চীনা নাগরিক চীন জং হু-এর মালিকাধীন শিলমান্দি ফুজিয়ান ওনান টেক্সটাইল মিলে কর্মরত লি রংহুয়া নামের ওই চীনা প্রকৌশলী নিহত হন।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওই প্রকৌশলীর পরিবারের তিন সদস্য মিলের সামনে অবস্থান করছেন। তারা হলেন নিতের স্ত্রী জিং মীলিং, মেয়ে লি জিজি এবং মেয়ের জামাই লি রংঙান।
এ ছাড়া একজন চায়না আইনজীবী ও এক স্বজন ঢাকায় রয়েছে বলে জানায় মিল কর্তৃপক্ষ।
তারা চীনা ভাষায় ছাড়া কথা বলতে পারে না বলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মিল কর্তৃপক্ষ নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, উচ্ছিষ্ট কাপড় থেকে সুতা তৈরি করা ফুজিয়ান ওনান টেক্সটাইল মিলে প্রায় আট মাস আগে যোগ দেন চীনা নাগরিক ৫৭ বছর বয়সী প্রকৌশলী লি রংহুয়া। তিনি চীনের জিয়াংসু প্রদেশের ফেংচেং শহরের বাসিন্দা ছিলেন।
গত ৩ মে রাতে মিলের কাজ করার সময় বেল মেশিনে জড়িয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে মারা যান লি। বিষয়টি নরসিংদী শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশকে জানানো হয় হয়। পরে মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকার উত্তরার নূরজাহান ক্লিনিকের হিমাগারে রাখা হয়। বিষয়টি নিহতের স্বজনদেরও জানানো হয়।
ফুজিয়ান ওনান টেক্সটাইল মিলের ম্যানাজার নওশাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মিলে দুর্ঘটনায় লি রংহুয়া নিহত হন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করি। নিহত লি রংহুয়ার পরিবারকে চীনে অবগত করি। সেই সঙ্গে মরদেহ বুঝে নেয়ার জন্য চীনে ৫ জনের জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠাই।
‘বৃহস্পতিবার চীন থেকে তাদের পাঁচ সদস্যের একটি টিম মরদেহ বুঝে নিতে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এ জন্য তারা আমাদের কাছে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মিলের সামনে অবস্থান শুরু করেন।’
ম্যানাজার নওশাদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের মালিক চীনা। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি তাদের প্রায় দেড় কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তারা বিষয়টি মেনে নেননি।
‘মিল মালিক আজ রাতেই চলে আসবেন। সাথে আমাদের একজন আইনজীবী আসছেন।’
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
নরসিংদী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন-অর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানায় কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে ওই প্রকৌশলী নিহত হন বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
‘সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মরদেহটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয় মালিকপক্ষ। কিন্তু নিহত প্রকৌশলীর স্বজনরা অযৌক্তিকভাবে অর্থ দাবি করে বসে আছে।’
এ ঘটনায় নরসিংদী মডেল থানায় ৫ মে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিন আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নরসিংদীর শিলমান্দিতে গত ৩ তারিখে মেশিন মেরামত করার সময় চলন্ত মেশিনের ওপর উঠে যান ওই চীনা নাগরিক। ফলে তার দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে মারা যান তিনি। বিষয়টি আমাদের জানানো হলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিহতের স্বজনদের মরদেহ বুঝিয়ে দিতে চায় মিল কর্তৃপক্ষ।’
শারমিন আক্তার বলেন, ‘চীনের আইন অনুযায়ী এমন দুর্ঘটনায় ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও মিলের মালিক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু প্রকৌশলীর পরিবারের সদস্যরা তা মানছেন না। তারা ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে মিলে অবস্থান করছেন।’