দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী ১৩ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে যে কোনো সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে এটি।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র খবরে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে বাগেরহাটের নদী তীরবর্তী উপকূলীয় মানুষের মাঝে। ‘মোখা’ আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন ওই অঞ্চলের মানুষ।
বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী কয়েক লাখ মানুষ ‘মোখা আতঙ্কে’ দিনপার করছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের পুটিমারি নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় দাস বলেন, ‘প্রতি বছরই ঝড় আসে, আমরাও আতঙ্কে থাকি। ছেলে-মেয়ে ও পরিবার নিয়ে এই নদীর পাশে আমাদের বসবাস। ঝড়-তুফান আসলে ঘরের মধ্যে পানি উঠে যায়, সাথে নদী ভাঙ্গন তো আছেই।’
একই এলাকার শেফালী রানী বলেন, ‘টিভিতে খবর দেখলাম যে, ঝড় আসতিছে। এটা শুনে ঘরে থাকা প্রয়োজনীয় মালামাল উঁচু জায়গায় রেখেছি। নদীর পাশে থাকা ঘরের খুঁটিগুলো মাটি দিয়ে শক্ত করেছি। আমাদের তো আর যাওয়ার জায়গা নেই, তাই আতঙ্কে থাকলেও এখানেই আমাদের থাকতে হয়।’
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত জেলেদের উপকূল তীরবর্তী এলাকায় নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
সে সঙ্গে ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
দূর্যোগ মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার ৯টি উপজেলায় প্রস্তুতিমুলক জরুরি সভা করা হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় জেলা প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) অংশ নেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমানের বলেন, “ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে; ৯ উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯টি মেডিক্যাল টিম।
“রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েক শ’ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভাপতিত্বে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভার আহবান করা হয়। সভায় সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ অংশগ্রহণ করেন।”
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা হারুণ-অর রশিদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি মোংলা বন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে ও শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রুপ নিয়েছে।
মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।