বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বর্ণিল সাজে কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ লেক, দর্শনার্থীদের ভিড়

  • মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ)   
  • ৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:১৬

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ লেক এখন রঙ্গিন আলোয় সেজে উঠেছে এক নতুন রূপে। একসময় যে লেকটি ছিল কচুরীপানায় ভরা, নোংরা-আবর্জনায় ভরপুর এবং অব্যবস্থাপনার কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায়, সেই লেকই আজ পরিণত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক বিনোদনকেন্দ্রে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লেকটির সৌন্দর্যবর্ধন ও সংস্কারের মাধ্যমে বদলে গেছে পুরো চেহারা। দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে লেকপাড়, সৃষ্টি হয়েছে আনন্দমুখর পরিবেশ।

রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে লেকের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম ও প্যাডেল বোট উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাগুফতা হক। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মাসুম বিল্লাহ, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ, কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায়, কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার হাফিজুর রহমান, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু তাহের হেলালসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনের পরপরই লেকপাড়ে ভিড় জমতে শুরু করে স্থানীয় জনগণের। নানা বয়সী নারী-পুরুষ, শিশু ও তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে লেকপাড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

লেকের চারপাশে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ফুটওয়াক নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে হাঁটতে পারেন ও চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। বসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক রঙিন টুল, যা সন্ধ্যার পর লেকপাড়ের আলোয় ঝলমল করে উঠে এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। লেকপাড়ের সড়ক সংস্কার করে তা হাঁটাচলার উপযোগী করা হয়েছে। এছাড়া দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য লেকে নামানো হয়েছে চারটি দৃষ্টিনন্দন প্যাডেল বোট, যা বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

রবিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেকের প্যাডেল বোটে চড়তে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীরা। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি বোটেই রাখা হয়েছে লাইফ জ্যাকেট, যাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি না থাকে। বোটে চড়ে অনেকেই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার লেকপাড়ের বসার টুলে বসে উপভোগ করছেন লেকের মনোরম দৃশ্য। বিকেলের নরম রোদে আর রাতের আলোকসজ্জায় লেকটি যেন এক আনন্দময় বিনোদন পার্কে রূপ নিয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী লাবিবা জানায়, আমাদের এখানে ঘোরার মতো কোনো ভালো জায়গা ছিল না। আগে বিকেলে বাড়িতে বসেই সময় কাটাতে হতো। এখন এই লেকে বোটে চড়ে খুব আনন্দ পাচ্ছি। বসার জন্যও খুব সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে, বন্ধুরা সবাই মিলে প্রায়ই আসার পরিকল্পনা করছি।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘কোটালীপাড়া কল্যাণ সংঘ’-এর সভাপতি সোহেল শেখ বলেন, একসময় লেকটি ছিল নর্দমার দুর্গন্ধ আর মশার উপদ্রবের জায়গা। হাসপাতালে আসা রোগী ও পথচারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হতেন। অব্যবস্থাপনা আর অবহেলায় জায়গাটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লেকটির পুরো চেহারাই এখন বদলে গেছে। এখন এটি কোটালীপাড়াবাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যেখানে মানুষ নিশ্চিন্তে বিকেল কাটাতে পারছেন।

কোটালীপাড়া সরকারি আদর্শ কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সমেন মজুমদার বলেন, প্যাডেল বোট একটি পরিবেশবান্ধব ও শান্তিপূর্ণ বিনোদনের মাধ্যম। এতে জলজ জীবনের কোনো ক্ষতি হয় না, আবার মানুষও শান্তিপূর্ণভাবে লেকের ভেতরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এটি পরিবার ও বন্ধুদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে। আমাদের এলাকায় এমন উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজন ছিল, যা অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

কবি ও সাহিত্যিক মিন্টু রায় বলেন, কোটালীপাড়ার দক্ষিণ সীমান্তের মাচারতারা গ্রামে একটি শিশু পার্ক থাকলেও দূরত্ব ও যাতায়াত সমস্যার কারণে সেখানে নিয়মিত যাওয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই উপজেলা পরিষদের এই লেক এখন হয়ে উঠছে মানুষের নিকটস্থ একটি বিনোদনের ঠিকানা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিক—সবাই এখানে এসে সময় কাটাবে ও আনন্দ খুঁজে নিবে একসাথে।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, লেকটিকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে আশাকরছি এটি কোটালীপাড়াবাসীর জন্য একটি বিনোদন স্পট হিসেবে পরিচিতি পাবে। লেকের চারিপাশে রঙ্গিন লাইট বসানো হবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় লেকের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। লেকের পাড়ে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানগুলোর কারণে পানির বোতল, কাগজের প্যাকেটসহ নানা আবর্জনা লেকে ফেলে যাতে পানি দূষিত না হতে পারে, এবং কোন ধরনের বিশৃংখলা না হয় সেজন্য সার্বক্ষনিক নজরদারীতে রাখা হবে পুরো এলাকা। আপাতত এক ব্যক্তিকে বোড চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি লেকের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করাসহ রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য জনসাধারণের কাছ থেকে নামমাত্র শুভেচ্ছামুল্যে নিয়ে লেকটিতে প্যাডেল বোট পরিচালনা করছেন।

উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ কেবল লেকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনেনি, বরং এটি স্থানীয় জনগণের মাঝে বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শহরের ব্যস্ততা আর গ্রামের নিস্তব্ধতার মাঝামাঝি এই লেক এখন মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই লেক দীর্ঘদিন ধরে বিনোদন ও সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।

এ বিভাগের আরো খবর