গাজীপুরের সালনায় কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা এবং তার মা ও দুই বোনকে জখমের ঘটনায় একমাত্র আসামিকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা থেকে বুধবার রাতে সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১-এর একটি দল।
গত ৮ মে রাতের ওই ঘটনায় কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সাইদুলকে।
যেভাবে কলেজছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে সখ্য
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সাইদুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ২০২০ সালে করোনাকালে পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে সাইদুলকে নিয়োগ দেন ছাত্রীর বাবা। আরবি পড়ানোর সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত কলেজছাত্রীর বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে পরিবারটির সঙ্গে সাইদুলের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় সাইদুল ওই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন এবং একপর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
র্যাব জানায়, ৫-৬ মাস আরবি শেখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেন সাইদুল। তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রীকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে সাইদুল বিয়ের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ছাত্রী ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে ছাত্রীর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
র্যাবের কমান্ডার জানান, ২০২২ সালের অক্টোবরে ওই ছাত্রী বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে গাজীপুর সদর থানায় অভিযোগ করেন, যে কারণে সাইদুল কিছুদিন তাকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন।
তিনি জানান, দুই মাস ধরে কলেজে এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন সাইদুল। বিয়েকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা না করলে ছাত্রীকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন তিনি। একপর্যায়ে সাইফুল জানতে পারেন, কলেজছাত্রীর পরিবার তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে ছাত্রী ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হন এবং ছাত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
যেভাবে হত্যা
র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কলেজছাত্রীকে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৭ মে বিকেলে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার ছুরি তৈরি করতে দেন সাইদুল। পরের দিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে কলেজছাত্রীর বাসায় গিয়ে তার কক্ষে ঢুকে মাথা, গলা, হাত ও পায়ে উপর্যুপুরি আঘাত করেন। ওই সময় ছাত্রীর চিৎকারে তার মা ও দুই বোন দৌড়ে ঘরে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সাইদুল ছুরি দিয়ে তাদেরও এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান।
তিনি বলেন, তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মা ও ছোট দুই বোনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাদের উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ছাত্রীর মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
র্যাব জানায়, সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করেন। তিনি গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করতেন। একই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। দুই মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দেন। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য তিনি নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করেন। এ অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
কলেজছাত্রীর পরিবারের বরাতে র্যাব জানায়, ভুক্তভোগী ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
বাহিনীটি আরও জানায়, পড়ালেখার পাশাপাশি প্রসাধন পণ্যের অনলাইন শপে চাকরি করতেন কলেজছাত্রী। তিনি উচ্চশিক্ষা নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ভিসাসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করছিলেন।