ধান কাটা-মারায় অনেক খরচ হয়েছে। আমার মতো এখন প্রায় সকল কৃষকের হাত খালি। ঘরে ধান আছে কিন্তু টাকার প্রয়োজনে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার ধান ১২শ টাকা মণ ঘোষণা করেছে। তবে এখনো সরকারি গুদামে ধান কেনা শুরু করেনি। তাই বাধ্য হয়েই মিল মালিকদের কাছে নয়শত চল্লিশ টাকা দরে ধান বিক্রি করছি বললেন গৌরারং ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ের কৃষক আশরাফ উদ্দিন।
আশরাফ ছাড়াও একই অবস্থা জেলার সকল কৃষকের। রোববার (৭মে) সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহ শুরু হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত পুরোদমে ধান কেনা শুরু হয় নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতকরণের কাজ আরও এক সপ্তাহ লাগবে। তবে কৃষকদের দ্রুত ধান সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ‘সুনামগঞ্জে এবার প্রায় পৌঁনে চার লাখ কৃষক ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদন করেছেন। কিন্তু ধানের এই বাম্পার ফলনেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। সরকার ধানের দাম প্রতিমণ ১২ শ টাকা নির্ধারণ করলেও জেলার কোথাও এক হাজার টাকার বেশি ধান বিক্রয় হচ্ছে না।
অন্যদিকে, খাদ্যমন্ত্রী গত রোববার ধান কেনা উদ্বোধন করলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার কোথাও ধান কেনার খবর পাওয়া যায়নি। কৃষকদের অনেকে গুদামে কবে কীভাবে ধান নেওয়া হবে এই তথ্যও জানেন না। কেউ বা হয়রানির কথা চিন্তা করে গুদামে ধান দিতে চাচ্ছেন না।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের কৃষক সাবিরুল ও মইনুদ্দীন বললেন, ‘সরকারি খাদ্য গুদামে ধান কেনা শুরু না হলে ধানের দাম বাড়বে না। কৃষক গুদামে ধান দিতে না পারায় সুযোগে নিচ্ছে মিল মালিকরা। তারা কম দামে ধান কিনছে। ধান যত দ্রুত সরকারী খাদ্য গুদাম কিনবে, ধানের দামও তত বাড়তে থাকবে। তবে সরকার ১২শ টাকা ধানের দাম নির্ধারণ করার পরপরই বাজারে ধানের দাম কিছুটা উঠেছে।’
সুনামগঞ্জ শহরের রাসেল অটো রাইস মিলের মালিক রাসেল আহমদ বলেন, ‘কৃষকরা একসঙ্গে ধান বিক্রয় করেন না। এজন্য ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারাও বেশিরভাগ ধান কিনেন। দফায় দফায় কেনা বেঁচা হওয়ায় কৃষকরা দাম কম পান।’
ধান কেনায় বিলম্ব, অথচ মিলারের চাল কেনা হচ্ছে দ্রুত। এটি কেন হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ধান কেনা শুরু হবে। কৃষকের তালিকা করতে বিলম্ব হচ্ছে।’
সদর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বেনু গোপাল দাস জানান, জেলায় ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান কেনা হবে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ পাঁচ উপজেলায় অনলাইনে এবং ছয় উপজেলায় সনাতন পদ্ধতিইে হবে ধান কেনা । চাল কেনা হবে নয় হাজার ৬৭৬ টন।