রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন হয়েছে। রোববার এক আসামির ভাই ও অপরজনের স্ত্রী এই রিট দায়ের করেন।
রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানান, আসামিদের আটক, গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তাই এক আসামির ভাই ও আরেক আসামির স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেছেন। রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। এ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।
রায় প্রকাশের পর ৩ মে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সেটা খারিজ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
ড. তাহেরের মেয়ে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসুম আহমেদ বলেন, ‘রিভিউ খারিজের রায় হাতে পেয়েছি। এটা একটা আশার আলো। এখন আশা করছি অতি দ্রুত রায় কার্যকর হবে।’
এর আগে ২ মার্চ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৮ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রিভিউ খারিজ করে দেয়।
ফলে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতেই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে তার আগে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। আর যথারীতি যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের সাজাভোগ করতে হবে।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী ও নিখিল কুমার সাহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
খালাসপ্রাপ্ত দুজন হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন জেল দেন হাইকোর্ট।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখে।