বগুড়ার প্রধান ডাকঘরে অর্থ লুট ও হত্যাণ্ডের মূল হোতা শফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ডাকঘরের ভল্টের সামনে পড়ে থাকা যন্ত্রের প্যাকেটের গায়ে লেখা কোডের সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলা পুলিশের দাবি, পেশাদার ডাকাত শফিকুল একাই এই লুট ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
৪০ বছর বয়সী শফিকুল ইসলাম নওগাঁর সাপাহারের পশ্চিম করমডাঙ্গার বাসীন্দা।
গতকাল সাপাহার উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ এপ্রিল ঈদের ছুটির সময় ডাকঘরের পাহারায় থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্যের মরদেহ উদ্ধার হয়। তখন জানা যায়, ভল্ট কেটে ৮ লাখ টাকাও লুট হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদ্ধারে তদন্তে নামে পুলিশ ।
‘তদন্তে ভল্টের সামনে বোস কোম্পানির একটি শান মেশিনের প্যাকেট পাওয়া যায়। এর গায়ে থাকা কোড ধরে বাবু মেশিনারিজ নামে একটি দোকানের সন্ধান মেলে। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে ডাকঘরের ফুটেজে দেখা ব্যক্তির মিল পায় পুলিশ।’
‘অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, শফিকুল ১২ মার্চ জামা তৈরি করতে বগুড়ায় এসেছিলেন। সে সময় ডাকঘরে তার মোটরসাইকেলটি পার্কিং করে রাখেন। ওই সময় ডাকঘরের অর্থ লেনদেনের কার্যক্রম দেখে লুটের পরিকল্পনা মাথায় আসে শফিকুলের।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিকুল সেদিনই রেকি করে নওগাঁয় ফিরে যান বলে উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর ১৫ মার্চ আবার বগুড়ায় এসে বাবু মেশিনারিজ থেকে গ্রিল ও তালা কাটার সরঞ্জাম ক্রয় করেন শফিকুল। পরে ২১ এপ্রিল রাতে সরঞ্জামগুলো ভিতরে রাখলেও সেদিন ভল্ট কেটে টাকা নিয়ে যেতে পারেননি। তাই ২৩ এপ্রিলে আবার টাকা নেয়ার জন্য আসেন তিনি।
‘ওই সময় ডাকঘরের পাহারায় থাকা প্রশান্ত কুমার টের পেলে শফিকুল তাকে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে টাকা নিয়ে ভোরে গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যান নওগাঁয়।‘
লুটের টাকা শফিকুল প্রথমে ব্যাংকে রাখেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এসপি সুদীপ কুমার।
তিনি জানান, নওগাঁ গিয়ে শহরের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে শফিকুল নিজের অ্যাকাউন্টে দুই লাখ টাকা জমা করেন। ওই দিনই ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে তার আরেক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা রাখেন।
পুলিশ এই টাকার সন্ধানও পেয়েছে জানিয়ে তিনি ‘বাকি টাকার খোঁজ চলছে’ বলে জানান।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় মোট ৯টি চুরি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকার বনানী এলাকার জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুটের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘ধরা পড়ার পর ডাকঘরের টাকা লুট ও হত্যার বিষয়ে সব স্বীকার করেছেন শফিকুল। আজকে তাকে আদালতে নেয়া হবে। সেখানে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।’