বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সাবেক তিন ছাত্রলীগ নেতাকে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে।
ওই তিনজন হলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন এবং বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্র কর্মপরিষদের ভিপি মঈন তুষার।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন বরিশালের সাবেক এই তিন ছাত্রলীগ নেতা। বর্তমানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার ঘিরে তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকউল্লাহ মুনিম বলেন, ‘জসীম, অসীম ও তুষার বরিশাল শহরে যে কতটা বিতর্কিত, তা সাধারণ মানুষ জানে। জসীম ধর্ষণ মামলার আসামি, অসীম অস্ত্র ও অপহরণ মামলার আসামি এবং তুষার বিএম কলেজের অধ্যক্ষকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে। এসব লোকজনকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর।’
১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খান বলেন, ‘যারা বরিশাল শহরে একসময় টেন্ডারবাজি করত, তাদের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটিতে রাখা হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর প্রতি যথেষ্ট সম্মানপূর্বক বলতে চাই, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দল-মত নেই। আমরা নৌকার জন্য কাজ করব, করছি। নৌকার প্রার্থীকে জয় লাভ করানোই আমাদের টার্গেট।’
কী বলছেন সাবেক তিন ছাত্রলীগ নেতা
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন, ‘যে মামলায় আমাকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছিল, সেই মামলা থেকে খালাস দিয়েছে আদালত।
‘আমি যদি সত্যিই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতাম, তাহলে মামলা ছয় মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যেত না। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল। সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা আমাদের নিষ্ক্রিয় করতে ফন্দি শুরু করেছে।’
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। আমার কর্মী রেজাকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে আমার নামেই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। রেজার ভাই আদালতে সাক্ষী দিয়েছে যে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগও মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ (বিএম) ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্র কর্মপরিষদের ভিপি মঈন তুষার বলেন, ‘শিক্ষককে মারধরের ছবিতে আমাকে তো তারা দেখাতে পারে না। ওই ঘটনায় তো আমি মামলার আসামিও না।
‘আমার ছবি বা ভিডিও যদি সাদিক আবদুল্লাহর লোকজন দেখাতে পারে, তাহলে চিরতরে রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাব।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভাষ্য
বিতর্ক ছড়ানো বিরোধীদের স্বাভাবিক আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতারাই আমার সঙ্গে কোনো সমন্বয় করছেন না। তাদের তো জোর করে নৌকার পক্ষে নামাতে পারব না।
‘যে যাই বিতর্ক-গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন, বরিশালবাসী এবার তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নৌকাকে বিজয়ী করবেই।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘আমরা নৌকাকে কীভাবে বিজয়ী করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। দলের মধ্যে থেকেই গোপনে কিছু লোক বিতর্ক করার চেষ্টা করছে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের দ্বন্দ্ব দিন দিন প্রকাশ্যে আসছে। খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী কমিটিতে সাদিকপন্থীদের না রাখাসহ মে দিবসে শ্রমিক লীগের ব্যানারে সাদিক ও খোকনপন্থীদের আলাদা শ্রমিক সমাবেশ, মিছিল দুজনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে এনেছে।