বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমপির নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ, প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ

  •    
  • ১ মে, ২০২৩ ২১:২৮

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সকরাল আ. মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপি শাহে আলম সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। তার কারণে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায় শত শত পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।’

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস‌্য মো. শাহে আলম তালুকদারের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করায় জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করেছেন প্রার্থীরা। সোমবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, উজিরপুরের রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচটি এবং বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই নিয়োগের জন্য ১৮ মার্চ বরিশাল জিলা স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন। তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে রামেরকা‌ঠি বিদ্যাল‌য়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুখেন্দু শেখরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এমপি শাহে আলম। সে কারণে নিয়োগ পরীক্ষা আর হয়নি। পরবর্তীতে সোমবার পুনরায় ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়।

এদিন এমপি শাহে আলম জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সংসদ সদস্যের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করলে প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হন প্রার্থীরা। তারা প্রধান শিক্ষককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

নি‌য়োগ প্রার্থী বিনয় হালদার বলেন, ‘অফিস সহকারী পদে পরীক্ষা দেয়ার জন্য সকাল ৯টার মধ্যে বরিশাল জিলা স্কুলে এসে বসে আছি। দুপুরে শুনি এমপি শাহে আলম পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছেন। এর আগেও একইভাবে এমপি এই পরীক্ষা বন্ধ করে দেন।’

খালেদ সরদার, সুকান্ত চন্দ্র দাসসহ আরও একাধিক প্রার্থী একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, এমপি শাহে আলম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছেন- প্রধান শিক্ষক এমন কথা জানালে প্রার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর প্রধান শিক্ষক পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার জন্য সময় ধার্য রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে তার কক্ষ থেকে সরে আসেন প্রার্থীরা।

রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুখেন্দু শেখর বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে পাঁচটি পদে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। ১৮ মার্চ পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন।

‘এমপি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে আমার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে নিয়োগ পরীক্ষা আর হয়নি।

‘ওই পরীক্ষা সোমবার পুনরায় বরিশাল জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ঠিক করা হয়। কিন্তু এসে শুনি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সংসদ সদস্য ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’

বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে এমপি শাহে আলম আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তার কারণে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।’

এছাড়া সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে তার সংসদীয় আসনের দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ স্থগিত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন উজিরপুরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।

তারা বলেন, ‘এমপি শাহে আলমের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দেয়া না হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে উজিরপুর উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

‘এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটির শীর্ষ পদে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও এমপি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দলের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।’

একটি মহল আমার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে ভুল ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই নিয়োগের বিষয় নিয়ে মানববন্ধন হয়েছে। তাই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার জন্য প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেছি।

হারতা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় এমপি শাহে আলম নিজে উপস্থিত ছিলেন। একটি পদে তার পছন্দের প্রার্থী ছিলেন। সেই প্রার্থী পরীক্ষায় প্রথম হয়ে চাকরি পেয়েছেন। নিয়ম ছাড়াই এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এমপি শাহে আলম নিজে নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত থাকছেন।’

একই ধরণের অভিযোগ করেন উপজেলার সকরাল আ. মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাকোঠা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম মৃধা।

তিনি বলেন, ‘নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপি শাহে আলম সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। তিনি অযাচিতভাবে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হয়ে প্রশ্ন করেন। তার কারণে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায় শত শত পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা।’

উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, ‘বরিশাল জিলা স্কুলে সোমবার সকাল ১০টায় রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছির। পরীক্ষা দিতে প্রার্থীরা সবাই আসেন। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এমপি শাহে আলম ফোন করে পরীক্ষা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন বলে প্রধান শিক্ষক আমাদের জানান।’

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য না হয়েও এমপি এভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার এমপি শাহে আলম মহোদয় আমাকে ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়ার অনুরোধ করেন। সোমবারও তিনি আমাকে ফোন দিয়ে নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্য বলেন। তার সম্মানে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।

‘পরীক্ষা বন্ধ করায় প্রার্থীরা একটু ক্ষিপ্ত হয়ে গেছিল। পরে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে এমপি শাহে আলম বলেন, ‘এই নিয়োগের বিষয় নিয়ে মানববন্ধন হয়েছে। তাই নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার জন্য প্রধান শিক্ষককে আমি অনুরোধ করেছি।’

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে অযাচিত হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে ভুল ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর