বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেট সিটি নির্বাচন: সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপির কাউন্সিলররা

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০৯:০৩

কাউন্সিলর রেজাউল হাসান বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার কাউন্সিলর। এলাকার সব দল-মতের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তারা এবারও আমাকে প্রার্থী হিসেবে চায়। আবার আমি আমার দলকেও ভালোবাসি। দলের সিদ্ধান্ত নির্বাচনে না যাওয়ার। ফলে কী করব বুঝতেছি না। উভয় সংকটে আছি।’

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নেতা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি। দলটির কঠোর এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপি দলীয় বর্তমান কাউন্সিলর ও এ পদে নির্বাচনে ইচ্ছুকরা। এতদিন ‘কাউন্সিলর পদে নির্বাচন দলীয় নয়’ দাবি করে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপরতা চালিয়ে এলেও দলীয় অবস্থানের কারণে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তারা।

কাউন্সিলর পদে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী প্রার্থী হতে তৎপরতা চালিয়ে আসছেন, তবে দলের চাপ সত্ত্বেও তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। প্রার্থীরা দলীয় পরিচয়ও ব্যবহার করেন না। সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে যে কেউ এতে প্রার্থী হতে পারেন।

নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়াটা ইতিবাচক বলে মনে করছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ২২ এপ্রিল ঈদ জামাত শেষে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশই বিএনপি নেতা। তারা যে ভোটে আসছেন, এটা খুবই সুখের বিষয়।’

২০১৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচনের সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ছিল ২৭টি। ২০১১ সালে নগরের এলাকা বর্ধিত করে ৪২টি ওয়ার্ড করা হয়। গত নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি সাধারণ এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের একটিসহ সাতটিতে বিএনপিপন্থি প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

ওই নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুর রকিম তুহিত জয়ী হন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম।

এই সাতজন ছাড়াও নগরের সাধারণ ও সংরক্ষিত ৫৬ ওয়ার্ডে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নিজেদের ওয়ার্ডে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন তারা। অনেকে পাড়ায় পাড়ায় সমর্থক ও ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠকও করছেন। এ ছাড়া গত রমজানে ইফতারসামগ্রী বিতরণ ও ইফতার পার্টি আয়োজনের মধ্যমেও সরব ছিলেন বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী।

প্রার্থিতার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েস এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তারা দুজনই সদ্য বিদায়ী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

কাউন্সিলর রেজাউল হাসান বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার কাউন্সিলর। এলাকার সব দল-মতের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তারা এবারও আমাকে প্রার্থী হিসেবে চায়।

‘আবার আমি আমার দলকেও ভালোবাসি। দলের সিদ্ধান্ত নির্বাচনে না যাওয়ার। ফলে কী করব বুঝতেছি না। উভয় সংকটে আছি।’

শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘দল থেকে বলা হয়েছে পদধারী কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না, কিন্তু আমার তো এখন দলে কোনো পদ নেই।’

এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কথা জানিয়েছেন কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমও।

তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষ তো আমাকে ছাড়ছে না। আমি এখানকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখনও কোনো প্রচার চালাইনি। প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথাও এখন পর্যন্ত বলিনি। আরেকটু সময় যাক। আমাদের দলের যারা কাউন্সিলর আছেন তাদের সঙ্গে বসে সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’

এবারও প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল।

তিনি বলেন, ‘আমি এবারও প্রার্থী হচ্ছি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির যেসব নেতা বর্তমান কাউন্সিলর হিসেবে আছেন, তারা এবারও নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে শুনেছি।’

২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, ‘এলাকার মানুষজন আমাকে প্রার্থী হওয়ার চাপ দিচ্ছেন। তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

‘আবার দলের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। ফলে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দলের সবাই বসে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’

কেবল বর্তমান কাউন্সিলররাই নয়, এবার প্রথমবারের মতো প্রার্থী হতেও ইচ্ছুক বিএনপির অনেকে। এখন পর্যন্ত তাদের তৎপরতাই নগরে বেশি।

তেমনই একজন ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল হাছিব।

তিনি বলেন, ‘দলের পরিচয়ের চাইতেও বড় পরিচয় আমি এই এলাকার সন্তান। এলাকা ও এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থেই আমি রাজনীতি করি। একই কারণেই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এ ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় মুখ্য না। কাউন্সিলরদের ব্যাপারে দলেরও নমনীয় হওয়া উচিত।’

কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বিএনপি নেতারা মাঠে তৎপরতা চালালেও মেয়র পদে এখন পর্যন্ত দলটির কেউ প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেননি, তবে বিএনপির অন্তত দুজন নেতা প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তারা হলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।

প্রার্থিতার বিষয়টি বিবেচনা করছেন জানিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার দল নির্বাচনে যাবে না, কিন্তু আমার ভোটাররা আমাকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। দল ও ভোটারদের কথা বিবেচনা করেই আমি একটি সিদ্ধান্ত নেব। মে মাসের শুরুর দিকেই তা সবাইকে জানাব।’

বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না। আমরা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে আছি।

‘আমাদের প্রত্যাশা আরিফুল হকও সরকারের ফাঁদে পা দেবেন না, তবে কাউন্সিলর পদে বিএনপির দায়িত্বশীল কেউ প্রার্থী হবেন না বলে আমার বিশ্বাস।’

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর