একুশ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলার রায়কে ‘ফরমায়েশি’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, ‘কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই এই রায়। আইন-আদালতকেও সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুষঙ্গ করে ফেলেছে। আর সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলেনে এসব কথা বলেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, ‘২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলার রায়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের ৭ বছর করে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ফরমায়েশি রায়।’
প্রিন্স বলেন, ‘বিরোধী দলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেয়া হচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেয়াসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে আদালতকে দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে।’
কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় ৪৮ আসামির মধ্যে সাবেক এমপিসহ চারজনকে মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এ ছাড়া অন্যদের সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া উপজেলার যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচ্চু, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রনজু ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রিপন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা এমরান সালেহ বলেন, ‘একটি মামলাকে পরে তিন মামলায় বিভক্ত করে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে সীমাহীন ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও প্রতিহিংসার কারণে তাদের জড়ানো হয়েছে। এমনকি এফআইআরে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নাম ছিল না।’
বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ বলেন, ‘এর আগেও ২০২১ সালে তৈরি করা আইনে হাবিবুল ইসলামকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি।’
তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজ আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রুপের আরও একটি নতুন চেহারা দেখা গেল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, এই রায় সেটিরই ধারাবাহিকতা। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ।’
সৈয়দ এমরান সালেহ আরও বলেন, ‘১০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমানকে সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে তার পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। স্বজনদের ধারণা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে তুলে নিয়ে গেছে। অবিলম্বে তাকে প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।