ব্যবসায়িক বন্দর ঝালকাঠিতে মৌসুমী ব্যবসা হিসেবে রয়েছে ছয়টি সেমাই কারখানা। রমজান এবং ঈদকে কেন্দ্র করে জেলার লোকজনদের সেমাইয়ের চাহিদা পূরণের জন্য এসব কারখানায় সেমাই তৈরিতে চলছে ব্যস্ততা।
মক্কা, জেদ্দা, মদিনা, মিনার, কুলসুম এবং সুর্যমুখী নামের ছয়টি সেমাই কারখানা রয়েছে ঝালকাঠি পৌর শহরে। রমজান মাস এলেই বাড়ে তাদের ব্যস্ততা। তিনশোর অধিক শ্রমিক কাজ করেন এখানে। আর এদের বেশিরভাগ মৌসুমী সেমাই শ্রমিক। রমজান এলেই মিল মালিকদের ডাকে সাড়া দিয়ে কাজে আসেন। বছরের অন্যান্য সময় এই শ্রমিকরা অন্য কাজ করেন।
কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে পুরোদমে চলছে লাচ্ছা এবং সলা সেমাই উৎপাদনের কাজ। মিল মালিকরা সেমাই সরবরাহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দূরত্ব অনুযায়ী ভ্যান, টমটম, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানে লোড করে পাঠানো হচ্ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বাজারে। আবার দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররাও এসে নিয়ে যাচ্ছেন।
কারখানা মালিকরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তারা মুনাফা কম পাবেন। কারণ তেলসহ কাঁচামালের দাম বাড়লেও বাজারে পাইকারি সেমাইয়ের দাম বাড়েনি।
ঝালকাঠির পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকার মক্কা ফুড প্রোডাক্টের মালিক মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট সেমাইয়ের পাইকারি দর ২৫ টাকা। আর লুজ বস্তা ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। বিগত কয়েক বছর ধরে একই দামে বিক্রি করতেছি। কিন্তু সেমাই তৈরির কাঁচামাল তেল, ময়দা, বনস্পতি এসবের দাম দুই বছরে বেড়েছে চারগুণ।’
আলী আজিম নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘বাজারে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে গতবার যে বেতন পেয়েছি এবারও তাই। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা আমাদের বেতন বাড়ায়নি।’
নলছিটির দপদপিয়া থেকে আসা ক্রেতারা বলেন, ‘ঝালকাঠির কারখানাগুলোতে কেমিক্যাল এবং রং ছাড়াই সেমাই উৎপাদন করা হয়। তাই আমি প্রতিবছর এই মোকাম থেকেই পাইকারি দরে সেমাই কিনতে আসি।’
মিল মালিক মিল্টন আকন বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রশাসন, গোয়েন্দা, সাংবাদিক ও ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা সচরাচর আসেন। কোনোরকম অসংগতি পেলে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হবে। তাতে কারখানার ব্যবসাসহ পুঁজিতেও ঘাটতি পড়বে। এজন্য উন্নতমানের সামগ্রী দিয়ে অল্প ব্যবসায় স্বাস্থ্যসম্মত সেমাই তৈরি করা হয়।’
সেমাই তৈরির কারিগর মো. দুলাল হোসেন বলেন, ‘ভোলা থেকে দুই মাসের জন্য ঝালকাঠিতে কাজে এসেছি। আমরা ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছি। আমাদের কারোর কোনো সংক্রামক ব্যাধি নেই। কোনো রং, কেমিক্যাল ছাড়াই শুধু ময়দা আর পানি দিয়ে শলা সেমাই তৈরি করি। শলা সেমাই কাঁচা থাকা অবস্থায় তেলে ভেজে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হয়।’