চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে স্কুল পড়ুয়া শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। ওই প্রতিবেদনে অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অর্পিত দায়িত্বে গাফিলতির জন্য শাস্তির সুপারিশ করা হয়। পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শকের নাম দুলাল মিয়া। তিনি ঘটনার সময় পাহাড়তলী থানায় কর্মরত ছিলেন। তবে অভিযোগের পর তাকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
২১ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী কাজীর দীঘি এলাকার বাসা থেকে বিড়ালছানা আনতে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ১০ বছর বয়সী আবিদা সুলতানা আয়নী ওরফে আঁখি মনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও না পেয়ে রাতেই পাহাড়তলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শিশুটির মা বিবি ফাতেমা।
থানা থেকে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় উপ-পরিদর্শক দুলাল মিয়াকে। তদন্তে নিখোঁজ শিশু আয়নীর স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এলাকার ভাসমান সবজি বিক্রেতা রুবেলকে লোকদেখানো জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেন দুলাল।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটির মা পরবর্তীতে আবারও এসআই দুলালকে রুবেলের কথা জানালে তিনি ‘আয়নী প্রেম করে পালিয়ে গেছে, জ্বীন চালান দিয়ে নিয়ে আসব’ বলে বিদ্রূপ করেন। রুবেলের নামে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতেও অস্বীকৃতি জানায়।
পরবর্তীতে ২৮ মার্চ সকালে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার আবেদন করেন বিবি ফাতেমা। মামলায় সবজি বিক্রেতা মো. রুবেলকে আসামি করা হয়। আবেদনের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক শরমিন জাহান পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সরাসরি এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার পর ওই রাতেই সবজি বিক্রেতা রুবেলকে আটক করে পিবিআই। পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে বিড়ালছানার লোভ দেখিয়ে শিশু আয়নীকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে রুবেল। তার দেখানো মতে পরদিন ভোরে একই থানার আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগির ফার্ম এলাকায় একটি ডোবা থেকে শিশু আয়নীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই।
ঘটনার পর থেকেই শিশুর স্বজনরা এসআই দুলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিলেন। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সিএমপির এডিসি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে ঘটনা তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
তদন্ত করে বুধবার সিএমপি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে ওই এসআই-এর দায়িত্ব ও শিশুটি নিখোঁজের ঘটনা তদন্তে তার ভূমিকা নিরূপণ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’