বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার সংঘাত এড়াতে চাইলে তাদের প্রথম কাজ হবে বিরোধী দলের দাবি পূরণ করা। আলোচনা করতে চাইলে তার আগে সরকারকে পদত্যাগ করে বা পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি এই সংসদ সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর। এই সংসদের তো কোনো গ্রহণযোগ্যতাই ছিল না জনগণের কাছে। কারণ তারা নির্বাচিত নয়, অনির্বাচিত সরকার।’
রাষ্ট্রপতির বিদায়ী ভাষণে সংঘাত এড়াতে সংলাপের ইঙ্গিত রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকার যদি চায় যে সংঘাত এড়িয়ে সামনের দিকে যাবে, তাহলে প্রথম কাজটা করতে হবে বিরোধী দলগুলোর দাবি পূরণ করা। অর্থাৎ সরকারকে পদত্যাগ করে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যদি বলে আমরা পদত্যাগ করব, তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে কথা বলব, তাহলে হয়ে যাবে।
‘সরকার পদত্যাগ না করে সংলাপের আহ্বান করলে তাতে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। আগে পদত্যাগ করতে হবে। অথবা ঘোষণা দিতে হবে যে আমরা পদত্যাগ করব।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তার হাতে তো সাংবিধানিকভাবে খুব বেশি ক্ষমতা নেই। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদে আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাষ্ট্রপতি কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার সেই ক্ষমতা নেই।
‘সুতরাং তিনি সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলে আপনারা মনে করছেন। কিন্তু আমরা মনে করি গতানুগতিকভাবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে তাকে যে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়েছে, তিনি সেটাই পাঠ করেছেন।
‘তারপরও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের একটা কথা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন- গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন কখনও সার্বজনীন হয় না। সংঘাত, প্রতিহিংসা নিয়ে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এ কথাগুলো ভালো। কিন্তু তারা যেটা প্র্যাকটিস করছেন, সেখানে গণতন্ত্রের বালাই নেই। বরং কী করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা যায় সে বিষয়ে তারা প্র্যাকটিস করছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল সংসদে অনেক বক্তব্য হয়েছে। এমন বক্তব্য করছেন যে মনে হবে এটা খুব ভালো সংসদ। কিন্তু হিসাব করলে খুঁজে পাওয়া যাবে না কয়টা মুলতবি প্রস্তাব সেখানে আছে। কয়টা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব করে আলোচনা হয়েছে। যে কথাগুলো মাঝে-মাঝে জনগণের দাবি হিসেবে উঠে আসে, সেগুলো নিয়েও সেখানে (সংসদে) আলোচনা হয়নি।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রায় ২২টি রাজনৈতিক দল এই সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন (যুগপৎ) করছি। সেখানে আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে- এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
‘আমরা আলোচনা করেছি, যুগপৎ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কী হতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেছি। চলমান আন্দোলনকে কীভাবে আরও এগিয়ে নেয়া যায় এবং ঐক্যকে কীভাবে আরও দৃঢ় করা যায়, সেগুলো নিয়েই আলোচনা করেছি।’
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশ হামলা চালাচ্ছে অভিযোগ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। আজ (শনিবার) আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিয়েছে। তারা বলছে- কর্মসূচি পালন করতে দেবে না। তারা গণতান্ত্রিক পরিসরগুলোকে ছোট করে ফেলেছে। এভাবে জনগণকে দমন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লৎফুর রহমান প্রমুখ।