বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণতন্ত্রের বিকাশে সংঘাত ভুলে আলোচনা প্রয়োজন: রাষ্ট্রপতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১৭:১৩

আবদুল হামিদ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে আমাদের সবার সহায়তা করা উচিত।

গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে চলমান বিশেষ অধিবেশনে শুক্রবার বিকেলে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। একাদশ সংসদের ২২তম অধিবেশনটি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শুরু হয়।

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয় বিকেল ৩টায়। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের এটিই জাতীয় সংসদে শেষ ভাষণ।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ এপ্রিল। রাষ্ট্রপতি হামিদ আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ডেপুটি স্পিকার এবং স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে আমাদের সবার সহায়তা করা উচিত।

‘রাজনীতি থেকে হিংসা-হানাহানি অবসানের মাধ্যমে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।’

জাতির বীর, সাহসী সূর্যসন্তানেরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব এই দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে আমি আজ দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- আসুন, সবার সম্মিলিত প্রয়াসে প্রিয় মাতৃভূমি থেকে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং যেকোনো উগ্রবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড হতে দূরে থেকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে শামিল হই। গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে এমন যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

জাতীয় সংসদকে গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সরকারের সব বিভাগের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে আদর্শ স্থাপনের গুরুদায়িত্ব বর্তায় এ মহান সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যদের ওপর। কেবল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতরাই সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব এবং জনগণের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারেন।

‘এ বিষয়ে সরকারি ও বিরোধী উভয় পক্ষের মাননীয় সংসদ সদস্যরাই জাতির নিকট দায়বদ্ধ। এই উপলব্ধি থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে আমি এ মহান সংসদে মাননীয় সংসদ সদস্যদের গঠনমূলক, কার্যকর ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’

সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় সংসদের কার্যক্রমকে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে হলে সংসদ সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। যুক্তিতর্কের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে হবে। সংসদ সদস্য হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হলে সংবিধান, কার্যপ্রণালি বিধি, সংসদীয় রীতিনীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে । এ ছাড়া সংসদের অতীত কার্যবাহ থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হতে হলে আপনাদের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসদ লাইব্রেরির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন আর সশরীরে লাইব্রেরিতে না গিয়ে অনলাইনে সবকিছু সংগ্রহ করা যায়।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা নয়। মনে চাইল কোনো দেশ থেকে পরিমাণমতো গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানি করলাম, বিষয়টি এমন নয়। চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র বিকশিত ও শক্তিশালী হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে-এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংসদের কার্যবাহে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যগুলো পড়লে বোঝা যায় সংসদকে কীভাবে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করতে হয়।’

‘পরমতসহিষ্ণুতা, বিরোধী দলকে আস্থায় নেয়া এবং অন্যকে কীভাবে সম্মান দেয়া যায়, এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় নজির রেখে গেছেন’, বলেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি আত্মমর্যাদাশীল, দেশপ্রেমিক জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে একটি অনন্য পরিচয়। সে পরিচয়কে আমাদের ঐকান্তিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা দিয়ে সমুন্নত রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নে আমাদের চিন্তা, কর্মপদ্ধতি ও কৌশল ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমাদের মধ্যে সুগভীর ঐক্য থাকবে জাতীয় স্বার্থ ও দেশপ্রেমের প্রশ্নে। হিংসা-বিভেদ নয়, স্বার্থের সংঘাত নয়-আমাদের সামনে রয়েছে আজ দেশ গড়ার কাজ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা গড়ে দিয়ে যাব একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- এই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তার রাজনীতির হাতেখড়ি ও প্রথম উত্থান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে তার দ্বিতীয় উত্থান বলে জাানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে হয়েছিল আমার রাজনীতির হাতেখড়ি ও প্রথম উত্থান আর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় উত্থান ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই এবং তার উদ্যোগেই।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অপার স্নেহ আর তার দূরদর্শিতার কারণেই আমি আজকে এই অবস্থানে পৌঁছেছি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আমি বেশি গর্ববোধ করি।’

সংসদে দেয়া তার বিদায়ী ভাষণে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেদিন আমাকে ডেপুটি স্পিকারের পদমর্যাদা না দিলে হয়তো বা কিশোরগঞ্জ ঘিরে আমার রাজনীতি আবর্তিত হতো।

এ বিভাগের আরো খবর