‘ভাত জোটে না’ লেখায় প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, অপপ্রচার চালানো একটি অপরাধ। এর প্রতিকার চেয়ে মামলা হতে পারে।
রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ (বিএসপি) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে উদ্দেশ্যপ্রষোদিত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বক্তব্য দিনমজুরের, ছবি শিশুর। একটি শিশুর ছবি ব্যবহার করে তাকে নিগ্রহ করা হয়েছে, যাতে জাতিসংঘের শিশু সনদ লঙ্ঘন করা হয়েছে।
‘অথচ তারা (প্রথম আলো) এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। ভুল স্বীকার করে পত্রিকায় কোনো বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট মিডিয়া হাউজ থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের টেলিফোন করা হয়েছে, দেনদরবার করা হয়েছে। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ে লেখার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
হাছান মাহমদু বলেন, ‘কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই, নেতিবাচক সংবাদ হলে সেটিকে ফলাও করে প্রচার করা হয়। আর দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রশংসা কিংবা বিভিন্ন সূচকে যখন আমরা এগিয়ে যাই, সেটি সেভাবে প্রচার করা হয় না। অনেক সময় খারাপ সংবাদকে গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয়। ভালো সংবাদ পরিবেশন করা হয় না।’
তিনি বলেন, “২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে একটি শিশুর হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, শিশুটিকে দিয়ে যে বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সে সেই বক্তব্য দেয়নি। একজন দিনমজুরের বক্তব্য দিয়ে ছাপানো হয়েছে, ‘স্বাধীনতা দিয়ে কী হবে, যদি খাইতে না পারি’। এভাবে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশের সব মানুষ এ ব্যাপারে মুখ খুলেছে, প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পত্রিকা ক্ষমা চায়নি। বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটির জন্য কেউ মামলা করে কি না সেটিই দেখার বিষয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে সব টেলিভিশনে প্রতিবেদন হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমগুলোতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে। এজন্য তো কোনো মামলা হয়নি? দ্রব্যমূল্য বাড়লে কিংবা কমলে রিপোর্ট হবে, খুবই স্বাভাবিক। জনগণের কষ্ট হলেও তা খবরে আসবে। সেজন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রশ্ন উঠেছে যে কেন রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়েছে। রাত ৪টায় অনেক সংসদ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দেশের কয়েক দফা মন্ত্রী ছিলেন, বড় রাজনীতিবিদ, তাদেরও রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তো কোনো প্রশ্ন আসেনি?
‘সবাইকে রাত্রে গ্রেপ্তার করা যাবে, আবার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না- এমন কোনো আইন নেই। দেখতে হবে, কোনো নির্যাতন করা হয়েছে কি না। নির্যাতনের কোনো অভিযোগ আসেনি।’
‘রমজানেও মানুষকে নিস্তার দিচ্ছে না বিএনপি
বিএনপির চলমান কর্মসূচি প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রমজানেও বিএনপি মানুষকে নিস্তার দিচ্ছে না এবং তাদের কর্মসূচি নিঃসন্দেহে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করছে।
‘আমরা কখনও শুনিনি, দেখিওনি যে পবিত্র রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশের সঙ্গে কোনো দল সংঘর্ষ বাধায়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ইসলামের কথা বলে। অথচ রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করে তারা কর্মসূচি পালন করছে। এটি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলো তাদের অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তবে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পেট্রোল বোমা তাণ্ডব দমনকারী আওয়ামী লীগ জানে কখন কী করতে হয়।’
‘তথ্যমন্ত্রীর হাতে প্রণব মুখার্জির জীবনীগ্রন্থ’
সভা শেষে প্রেসক্লাব অভ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট গৌতম লাহিড়ীর পাঠানো তার সদ্য প্রকাশিত ‘প্রণব মূখার্জি: রাজনীতির ভেতর ও বাহির’ গ্রন্থটি মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তরুণ সাংবাদিক জাকওয়ান হুসাইন।