নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এ প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক হন জেসমিন। ২৪ মার্চ সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
র্যাবের ভাষ্য, জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।
জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, ‘আমার ভাগ্নিকে র্যাব আটকের পর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে থাকি। পরে জানতে পারি যে, সে নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে দেখি র্যাবের লোকজন তার চারপাশে। এর কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সে মারা যান।’
জেসমিনের পরিবারের ভাষ্য, জেসমিনের সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হয় ১৭ বছর আগে। এরপর তিনি তার এক সন্তানকে অত্যন্ত কষ্ট করে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে লালন-পালন করছিলেন। তার বিরুদ্ধে কখনও কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করতে পারেননি।
ওই নারীর ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদ হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছে। র্যাবের হেফাজতে নির্যাতন চালানোয় আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ’
এ বিষয়ে র্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, ‘জেসমিনের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পায় র্যাব। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাবের হেফাজতে নেয়া হয়, কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
‘পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেয়ার পরামর্শ দেন, কিন্তু রাজশাহীতে নেয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।’