সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নেয়ার বিকল্প ছিল না বলে দাবি করেছেন সদ্য নির্বাচিত আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী নেতারা।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এমনটা দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল। এ সময় সমিতির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকিরসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘নির্বাচনে আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন একতরফা হয়নি।’
নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘তাদের গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটবিরোধী, নির্বাচনবিমুখ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুস এজন্য দায়ী।’
লিখিত বক্তব্যে আব্দুন নূর দুলাল বলেন, ‘প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান এবং সম্পাদক মো. আবদুন নূর দুলাল সমিতির কনফারেন্স রুমে বসে ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করছিলেন। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা দিয়ে বহিরাগত লোকজনসহ সন্ত্রাসী কায়দায় মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল কনফারেন্স রুমে ঢুকে আহ্বায়ককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।
‘তারা টেবিলের ওপরে থাকা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে কিছু ছিঁড়ে ফেলেন এবং কিছু নিয়ে যান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক।’
‘এছাড়াও তারা ব্যালট পেপার তছনছ করেন এবং পায়ে মাড়িয়ে দলিত মথিত করেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। ফলে নির্বাচনের আগের রাতেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ভোটগ্রহণ শুরুর চেষ্টা করলে মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে অনেক বহিরাগত সন্ত্রাসী প্যান্ডেলে ঢুকে পড়েন ও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন।
‘ভোটগ্রহণ বিলম্বিত হতে থাকে এবং একটানা ভাঙচুর চলতে থাকে। এ অবস্থায় ভোটগ্রহণ শুরু ও সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ ব্যতীত কোনো বিকল্প অবশিষ্ট ছিল না।’
আবদুন নূর দুলাল বলেন, ‘ইতোপূর্বে সব নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেয়া হয়। বর্তমান নির্বাচনেও পদত্যাগকারী আহ্বায়ক মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী সহায়তা চেয়ে চিঠি দেন। এমনকি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।’
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘দায়িত্ব পালনকালে ঘটনার আকস্মিকতায় সাংবাদিকরা কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সামগ্রিক দায়ভার বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটবিরোধী, নির্বাচনবিমুখ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সামগ্রিক বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সংযম, দায়িত্বশীলতা ও গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল অঙ্গীকারের পরিচয় দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা-মামলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। দুই দিনব্যাপী এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ১৪ পদে জয়লাভ করেন।