জার্মানির ডর্টমাউন্ড শহরে পরিচায় হওয়া হারুনকে প্রায় ৩৭ বছর পর খুঁজে পেয়েছেন তার বন্ধু জার্মানপ্রবাসী মহিরুদ্দিন। অবশেষে তাদের যোগাযোগ হয়েছে; মোবাইল ফোনের ভিডিওকলে কথাও বলেছেন তারা।
একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বন্ধুকে খুঁজছিলেন ৬২ বছরের মহিরুদ্দিন। সেই বিজ্ঞাপন ফেসবুকে শেয়ার করেন দৈনিক সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ রনি। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। পরে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
শনিবার দুই বন্ধুর ভিডিওকলে কথা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহিরুদ্দিনের পক্ষে বিজ্ঞাপন দেয়া গোপালগঞ্জের শিক্ষক ওমর ফারুক ও সাংবাদিক আবু সালেহ রনি।
ওমর ফারুক বলেন, দুই বন্ধুর কথা হয়েছে। দুইজনেই খুব আপ্লুত। বহু বছর পর তারা দুজন দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। হারুনের বাড়ি ফরিদপুরে। সেখান থেকেই তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের দেখাও হবে।
হারুনুর রশীদ ওরফে হারেজ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা কামালদিয়া ইউনিয়নের কামালদিয়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মাজেদ শেখের ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। নিজের জমিতে চাষাবাদ তার পেশা।
এর আগে শুক্রবার পত্রিকায় বন্ধুকে খোঁজার ওই বিজ্ঞাপন ছাপা হয় একটি দৈনিকে। জার্মানপ্রবাসী মহিরুদ্দিনের পক্ষে বিজ্ঞাপন দেয়া ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে এদিন রাতে বলেন, ১৯৮৬ বা ৮৭ সালের দিকে যখন হারুন রশিদ নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে মহিরুদ্দিনের পরিচয় হয় তখন তাদের বয়স ২৫ কিংবা ২৬ বছর।
তিনি জানান, দুই বন্ধুর বয়সই এখন ৬০ বছরের বেশি। মহিরুদ্দিন পরিবার নিয়ে জার্মাানিতেই থাকেন। তারা বন্ধু ছিলেন। অনেক দিন খোঁজ নেই হারুনের। তার নাম হারুনুর রশিদ বা শেখ রশিদ ছিল। তার কোনো ছবি নেই।
‘সাক্ষাৎ চাই’ শিরোনামে ওমর ফারুকের মাধ্যমে জার্মানি থেকে বিজ্ঞাপন দেন মহিরুদ্দিন। ওই বিজ্ঞাপনে ফুটে ওঠে বন্ধুকে দেখতে তার আকুলতার কথা।
বিজ্ঞাপনে লেখা হয়, ‘আমি মহিরুদ্দিন ১৯৮৬/৮৭ সালে জার্মানির ডর্টমাউন্ড শহরে অবস্থানকালে হারুনুর রশিদ/শেখ রশিদ নামে একজন সেখানে ছিল। যথাসম্ভব তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী।
‘ওই সময়ের পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই। তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে। তাই ফোন নম্বর- (একটি ফোন নম্বর) যোগাযোগ করলে বা কেহ সন্ধান দিলে খুব খুশি হব। সাক্ষাৎপ্রার্থী মহিরুদ্দিন।’
সাংবাদিক আবু সালেহ রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পোস্টটি ভাইরাল ও এ নিয়ে নিউজবাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর আমার পোস্টে শুক্রবার রাত ২টা ৩৩ মিনিটে একজন জানান তিনি হারুন ভাইকে চেনেন। এরপর তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে ফোন নম্বর সংগ্রহ করলে মধ্যরাতেই তার সঙ্গে কথা হয়! পরে দু বন্ধুর যোগাযোগ হয়।’
তিনি বলেন, ‘হারুন ভাইয়ের সন্ধানে জার্মানপ্রবাসী মহিরুদ্দিনের পক্ষে শুক্রবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন গোপালগঞ্জ মালেকা অ্যাকাডেমির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ওমর ফারুক। তাকে এই বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন মহিরুদ্দিনের বন্ধু কানাডা প্রবাসী গোপালগঞ্জ মালেকা অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান শওকত আলী।’
শওকত আলী বলেন, ‘বন্ধু মহিরুদ্দিন অনেক বছর ধরেই হারুন ভাইকে খুজঁছিলেন। আমাকে কয়েকবার বলার পর হারুন ভাইকে খোঁজ করতে ফরিদপুরে তিনবার বিভিন্নজনকে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ তার সন্ধান পাননি। এক পর্যায়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার চিন্তা করি এবং আমার স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ওমর ফারুককে অনুরোধ করি।
‘সেখানে ফারুককে কেউ ফোন দিলে মহিরুদ্দিনের পরিচয়ে কথা বলতে বলেছিলাম, কারণ মহিরুদ্দিন জার্মানিতে আছেন। হারুন ভাইয়ের মোবাইল নম্বর পেয়েছি এবং ৩৭ বছর পর দুই বন্ধুর ভিডিও কলে কথা হয়েছে।’
জার্মানপ্রবাসী মহিরুদ্দিন বলেন, ‘ধন্যবাদ শওকত আলী ভাইকে, তিনি এখন বাংলাদেশে আছেন। আপনাদেরও ধন্যবাদ।’
হারুনুর রশিদ জানান, তার যতদূর মনে পড়ে, তারা তিন বন্ধু থাকতেন জার্মানিতে। পাসপোর্ট জটিলতায় তিনি ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন। বন্ধুকে এতদিন অনেক খুঁজেছেন। অবশেষে কথা হয়েছে।