দীর্ঘ এক যুগেও শেষ করা যায়নি ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প। খাল খনন কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ করতে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ওই সময়ের মধ্যেও এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা যাবে কি না তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষায় ২০১৪ সালে এ খাল খননের প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। গত ১২ বছরে এ খাল খনন কার্যক্রম শেষ হয়নি। অথচ এ খালের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে এ খাল খনন কার্যক্রম শেষ করতে দীর্ঘসময় লাগছে। আশা করছি ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এ খাল খনন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তখন বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, বাকলিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার কয়েক লাখ মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে।’ মেয়র আরও বলেন, বর্তমানে এ খননের আওতায় ৮টি ব্রিজ, ৭ হাজার ৮০০ ফুট খাল খনন, ৮ হাজার ফুট প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণ, ৫ হাজার ৫০০ ফুট ড্রেন, ৫ হাজার ফুট রাস্তা নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১৯৯৫ সালে করা ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত দুই দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর খালটি খননের সুপারিশ করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চসিক। এর প্রায় আড়াই বছর পর ২০১৪ সালের ২৪ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ওই সময়ের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় এ প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করে আবারও অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ সময় এক লাফে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এখন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়দ বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে ১ হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৫ দশমিক ২৩৫ একর জমি অধিগ্রহণে। সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, ‘২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি হবে ৬৫ ফুট চওড়া। খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রাস্তা হবে এবং ছয় ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে। প্রকল্পটির ১৫ দশমিক ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার প্রতিরোধ দেওয়ালের মধ্যে ৫ কিলোমিটার, সাড়ে ৫ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে চার কিলোমিটার, ৯টি ব্রিজের মধ্যে ছয়টি, ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ও ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার খালের মধ্যে ২ কিলোমিটার খাল খনন কাজ শেষ হয়েছে। খালটি বারইপাড়া হাইজ্জারপুল থেকে শুরু হয়ে খালটি নূর নগর হাউসিং, ওয়াইজের পাড়া, বলিরহাটের বলি মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশবে। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মো. ইউনুস বলেন, ‘মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট বৃষ্টি হলেই বহদ্দারহাটসহ নগরের বেশিরভাগ এলাকায় পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। পানি ঢুকে ঘরবাড়িসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এ সমস্যা বছরের পর বছর ধরে। জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। এসব প্রকল্পে মেয়াদ আর টাকা বাড়ে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলেনা। বরং জলাবদ্ধতার সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।’