জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নিতে বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
প্রস্তাব দুটি হলো- রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেয়ার খরচ বহন করা এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ভাষানচরে আরও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, মানবিক কার্যক্রম বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
মুখ্য সচিব বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রথম প্রস্তাব প্রসঙ্গে মুখ্য সচিব বলেন, ‘সরকার ভাসানচরে ১ লাখ লোকের বসবাসের জন্য আবাসন তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৩০ হাজার নেয়া হয়েছে। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে নিতে চাই। এই স্থানান্তর ব্যয়বহুল বিষয়।
‘আমরা আশা করছি বন্ধু রাষ্ট্র যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে, তারা এই লোকদেরকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেয়ার খরচ বহন করবে। প্রধানমন্ত্রী এটি সিরিয়াসলি চাইছেন।’
দ্বিতীয় প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভাসানচরে যে জমি আছে তার তিনভাগের একভাগ আমরা ব্যবহার করেছি। বাকি দুই ভাগ জায়গাতেও প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন অবকাঠামো নির্মিত হোক এবং আরও রোহিঙ্গাদের সেখানে নেয়া হোক। বাংলাদেশ সেখানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা চেয়েছে।’
তিনি জানান, বৈঠকে বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গুরুত্ব দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে মানবিক সহায়তা পাচ্ছি। ২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে আমাদের দিক থেকে চাওয়া ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু তার ৬২ শতাংশ পাওয়া গেছে। আমরা এ সহায়তা আরও বাড়াতে বলেছি।’
বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১৭ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন -অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসডুপুয়, জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে
অন্যদের মধ্যে ইউএন রাষ্ট্রদূত গুইন লুইস, ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ, ডব্লিউএফপি আবাসিক প্রতিনিধি ডম স্কালপেলি, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুজান মুলার, জাপানি মিশনের উপ-প্রধান মাচিদা তাতসুয়া, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের উপ-প্রধান থিজ ওয়াউডস্ট্রা, তুর্কি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ বাতুহান গুরহান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার প্রধান এবং হোস্ট কমিউনিটিস প্রোগ্রাম অফ কানাডিয়ান হাইকমিশন বিবেক প্রকাশ এবং দূতাবাসের আঞ্চলিক উদ্বাস্তু সমন্বয়কারী ম্যাকেঞ্জি রোও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।