মেহেরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফল ও ফসল চাষাবাদে পাখির উপদ্রব ঠেকাতে কৃষকের পেতে রাখা কারেন্ট জালে আটকা পড়ে নির্বিচারে মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
পাখিপ্রেমীরা মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের নীরবতায় বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা অবাধে কারেন্ট জালের মতো পাখির জন্য বিপদজনক পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল রক্ষার নামে পাখি নিধন করছেন। তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জমিতে নানা ধরনের মৌসুমি ফল ও সবজির বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের অনেকেই বরই, পেয়ারা, লিচু, ড্রাগন ফলসহ বেগুন ও টমেটো ক্ষেতে পাখির উপদ্রব থাকায় ফসল ও ফল রক্ষার্থে তারা নানা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
উল্লেখযোগ্য প্রচলিত বেশ কয়েকটি পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাচীনতম কাকতাড়ুয়া পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, জমিতে খুঁটি গেড়ে তাতে বিভিন্ন রংয়ের ফিতা টাঙানো, গুড়ের খালি টিনের দড়ি বেঁধে শব্দ করা, তবে অধিকাংশ জমিতে এসব পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি বাদ দিয়ে অনেকেই পাখিদের জন্য বিপজ্জনক পদ্ধতি কারেন্ট জাল দিয়ে ফসলি জমিকে পুরোপুরি ঢেকে দিচ্ছে।
আবার স্থানীয় মাছ চাষিরা মাছ রক্ষার্থে পুকুরে ওপরেও ব্যবহার করছে এ কারেন্ট জাল, যাতে আটকা পড়ে মারা পড়ছে মাছরাঙা, বকসহ আরও নানান প্রজাতির পাখি।
গাংনী পৌরসভাধীন মালশাদহ গ্রামের পেয়ারা ও বরই চাষি আমানতুল্লাহ বলেন, ‘আমার প্রায় আট বিঘা জমিতে পেয়ারা ও বরইয়ের আবাদ রয়েছে। গাছের ফল একটু পরিপক্ব হলেই শুরু হয় পাখির আক্রমণ। তাই ফল যদি রক্ষা করতে না পারি, তাহলে লোকসানে পড়তে হবে তখন আমাদের রক্ষা করবে কে, তাই নিজে বাঁচতে ফল রক্ষার জন্য এ জালের ব্যবহার করি।’
একই উপজেলার তেরাইল গ্রামের পুকুরে মাছ চাষ করা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেড় বিঘা জলাধারে দেশি মাছ চাষ করি। সকালে যখন পুকুরে মাছ ভাসে তখন চার পাঁচটা মাছরাঙা আর বকে মাছ খাওয়ার পাল্লা দিতে থাকে। এদের হাত থেকে মাছকে রক্ষা করতে কখনও চিকন চিকচিকি পলিথিন, কখনও কালিমাখা হাড়ি টাঙিয়েছি কোনো লাভ হয়নি। এবার কারেন্ট জাল টাঙিয়েছি এখন পাখি ভয় পায়। কম আসে, আর যে আসে সে আটকা পড়ে।’
মেহেরপুর বার্ডস ক্লাবের সদস্য ও পাখি সংরক্ষণকারী মানিক হক বলেন, ‘প্রকৃতিকে সুন্দর করে রাখে পাখি। আর এ পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। অনেক পাখি ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে থাকে। ফসলের ওপর থেকে বিরূপ প্রভাব ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রকৃতির বন্ধু পাখি রক্ষায় প্রশাসনের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ফসল উৎপাদনের যেমন বিকল্প নেই ঠিক তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পরিবেশে থাকা পশুপাখিরও বিকল্প নেই। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা যতটুকু না ফসলের ক্ষতি করে, সবজির ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে থাকে। সেক্ষেত্রে ফসল, ফলসহ পুকুরের মাছ রক্ষার জন্য আমরা যেন এমন কোনো পদ্ধতি অবলম্বন না করি যাতে করে প্রকৃতিতে থাকা পশুপাখির প্রাণহানি হয়। আর এমনটি কেউ করলে তিনি ঠিক করছেন না।’
গাংনী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হোসেন নাজির বলেন, ‘ফসল রক্ষা করতে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বন্য পশু-পাখি নিধন করা যাবেনা। প্রকৃতি রক্ষার্থে পশু-পাখিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেউ যেন ফসল রক্ষা করতে গিয়ে পাখিদের নিধন না করে। পাখি নিধনের তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’