২০০৬ সালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেন নি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন গ্রামের ৭০ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ যতিন্দ্রনাথ। পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও পায়নি। এক সময় তার আশা ছেড়ে দিয়েছিল স্বজনরা।
কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ১৭ বছর পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সহযোগীতায় বাবাকে ফিরে পেলেন ধামইরহাট উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মেয়ে সাবিনা এক্কা। তাকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৬৪ (বিএসএফ) আওতাধীন ডাংগী বিএসএফ ক্যাম্প পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) সীমান্ত পিলার ২৬০/৭-এস এর কাছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে মঙ্গলবার দুপুরে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাবিনা এক্কার বাবা যতিন্দ্রনাথ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ১৭ বছর আগে নিজ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সাবিনা লোক মারফত জানতে পারেন তার বাবা ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থানার রায়নগর গ্রামের মন্দিরে অবস্থান করছে। এরপর পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হামিদ উদ্দিনের কাছে বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সহযোগিতা কামনা করেন।’
পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হামিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৬৪ (বিএসএফ) আওতাধীন ডাংগী বিএসএফ ক্যাম্পকে জানানো হয়। তারাও মানসিক ভারসাম্যহীন যতিন্দ্রনাথকে ফিরিয়ে দিতে আশ্বস্থ করেন। ভোরে পিলার ২৬০/৭-এস এর কাছে বিএসএফ সদস্যরা তাকে হস্তান্তর করেন। এরপর যতিন্দ্রনাথকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
যতিন্দ্রনাথ এর মেয়ে সাবিনা এক্কা বলেন, ‘তারা দুই ভাই ও দুই বোন। বড় বোন মিন্না এক্কা। ২০০১ সালে সে দশম শ্রেণীতে পড়ত। হঠাৎ করেই বড় বোন অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বোন মারা যাওয়ার পরিবারের সবাই ভেঙে পড়ি। বাবা ও মা খিরতি রানী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বাবা অনেক সময় উল্টোপাল্টা ও অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে। ২০০৬ সালের একদিন কাউকে কিছু না বলেই প্যান্ট-শার্ট পড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি।’
সাবিনা বলেন, ‘আমার স্বামী নারায়ন চন্দ্র তার চিকিৎসার জন্য ৪-৬ মাস পর পর ভারতে যায়। চিকিৎসা শেষে যতটুকু সময় পাই বিভিন্ন এলাকা ও মন্দিরে খোঁজ খবর নিতাম। মানুষদের ছবি দেখানোর এক সময় বাবার ছবি দেখে স্থানীয়দের একজন চিনতে পারে। পরে বালুরঘাট রায়নগর কালিমন্দিরের বারান্দায় বাবার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে খড়ের মধ্যে শুয়েছিল। পরে স্বামী ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবাকে দেখায় এবং নিশ্চিত হতে পারি।
‘বিজিবিকে বিষয়টি জানানো হলে তারা বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘ বছর পর বাবাকে এভাবে ফিরে পাবো তা কখনোই ভাবিনি। বিজিবি ও বিএসএফ এর সহযোগীতায় রাতে বাবাকে ফিরে পেয়েছি। বাবাকে কাছে পেলাম তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম।’