সারা দেশের কারাগারগুলোর কনডেম সেলে দুই হাজার ১৬২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
কারা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনটি সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা হয়। পরে প্রতিবেদনটি দেখে আদালত কনডেম সেলের ভেতরে কী কী ব্যবস্থাপনা আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন ঠিক করে আদালত।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদির এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দেয়া হয়।
গত বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত তৈরি করা এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য সেলের সংখ্যা দুই হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য দুই হাজার ৫১২টি। আর নারীদের জন্য ১৪৫টি।
দুই হাজার ৬৫৭টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছে দুই হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা দুই হাজার ৯৯। নারী রয়েছেন ৬৩ জন।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে। এক হাজার ৮৪টি সেলের মধ্যে এ বিভাগে বন্দি রয়েছে এক হাজার ২৯৫ জন। আর সর্বনিম্ন সেল রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।
ওই বিভাগে ৫৪টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছেন পাঁচজন। সেখানে কোনো নারী বন্দি নেই।
কারাগারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে এক হাজার সেলের মধ্যে রয়েছে ৯৫১ বন্দি, তবে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে সেল থাকলেও বন্দি নেই। আর সেল নেই ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রাম জেলায়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি।
আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আবদুর বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলে হাইকোর্ট।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের বিধান রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন।
তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিউ আবেদনের আইনি সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯-এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সে ক্ষমার আবেদন নাকচ করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা পান, কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।