বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোয়েন্দা পরিচয়ে পুলিশকে ‘ঘোল খাইয়ে’ লুটপাট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৬:২০

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আবদুল কুদ্দুস বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির টাকা, জমি ও ফ্ল্যাট উদ্ধারের নামে প্রতারণা করতেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা পরিচয়ে অভিযানের নামে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী আত্মসাতের হোতা আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদকে গ্রেপ্তার করছে র‍্যাব।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২৫ জানুয়ারি রাতে সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা গ্রামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে অভিযান চালায় কিছু দুর্বৃত্ত। অভিযানের নামে তারা বাড়িগুলোতে লুটপাট চালায় এবং তল্লাশির নামে বেআইনিভাবে একজন গৃহবধূর শ্লীলতাহানি করে। এ ঘটনায় একজন বাদী হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।

র‍্যাব জানায়, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিজন রায়কে ১৬ ফেব্রুয়ারি মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত বিজনের মাধ্যমে র‌্যাব জানতে পারে, সুনামগঞ্জের ওই এলাকায় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে লুটপাট এবং চাঁদাবাজির মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কুদ্দুস। বিজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবদুল কুদ্দুসকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৪।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আবদুল কুদ্দুস বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির টাকা, জমি ও ফ্ল্যাট উদ্ধারের নামে প্রতারণা করতেন।

আবদুল কুদ্দুস ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে প্রশাসনের সহায়তা নিতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, চার-পাঁচ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপের মাধ্যমে বিজনের সঙ্গে আবদুল কুদ্দুসের পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে রাজধানীতে বিভিন্ন সময় বিজনের সঙ্গে সাত থেকে আটবার সাক্ষাৎ করেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বিজনের আমন্ত্রণে তার বাড়ি সুনামগঞ্জে যান। বিজনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক ছিল। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিজনের সঙ্গে সুনামগঞ্জে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে কৌশলে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন আবদুল কুদ্দুস।

র‍্যাবের মুখপাত্র জানান, সুনামগঞ্জে গিয়ে আবদুল কুদ্দুস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জানান, তিনি মাদকের একটি চালানের বিরুদ্ধে অভিযান করতে এসেছেন এবং অভিযানের জন্য তাদের সহায়তা দরকার। পরে বিজন ও অন্য সহযোগীদের সমন্বয়ে সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে লুটের পরিকল্পনা করেন। প্রথমত তারা লুটের উদ্দেশ্যে ওই এলাকায় বিত্তশালী কয়েকটি বাড়িকে লক্ষ্যবস্তু বানান। তিন দিন ধরে টার্গেট করা বাড়ি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন তারা।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আবদুল কুদ্দুস ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাস্থলে যান। তিনি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা জানিয়ে তাদের ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোকসেদ আলীর বাড়িসহ আশেপাশের বাড়িতে তল্লাশি চালান। বাড়িতে থাকা লোকজনের শ্লীলতাহানি করেন। ওই সময় তারা অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেন।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে তারা অভিযান শেষ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংবাদ দেয়। এ সময় সে নিজেকে গোয়েন্দা শাখার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

‘সে গত পাঁচ-ছয় বছর যাবত ঢাকা ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা সংস্থার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে অভিযানের নামে বিভিন্ন বাড়ি থেকে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে।’

কে এই আবদুল কুদ্দুস

র‍্যাব জানায়, আবদুল কুদ্দুস ঢাকা জেলার একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। সিকিউরিটি গার্ডে চাকরির সুবাদে তিনি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন।

এসব কার্যক্রম রপ্ত করে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা করে আসছেন আবদুল কুদ্দুস। এর আগে তিনি একই অপরাধে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগও করেন।

এ বিভাগের আরো খবর