‘তৃণমূল বিএনপি’র কারণে একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছিল বিএনপিতে। ১৬ ফেব্রুয়ারি দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার সেই অস্বস্তিতে জোর হাওয়া লাগে। এর মধ্যেই ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে মৃত্যু হয় নাজমুল হুদার। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের আকস্মিক এ মৃত্যু সব হিসাব ও পরিপ্রেক্ষিত পাল্টে দেয়।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, নাজমুল হুদার অবর্তমানে কী হবে তৃণমূল বিএনপির? জবাবে হুদা পরিবার বলেছে, নাজমুল হুদার হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সংগঠনটি এগিয়ে যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকেই দলের হাল ধরা হবে।
নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদা একজন আইনজীবী। তার দুই মেয়ে অন্তরা সেলিম হুদা ও শ্রাবন্তী আমিনা হুদা। ব্যারিস্টার অন্তরা ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
সিগমা হুদা তৃণমূল বিএনপির কোনো পদে নেই। স্বামীর অবর্তমানে পরিবার থেকেই হাল ধরা হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।
নাজমুল হুদার স্ত্রী বলেন, ‘বড় মেয়ে অন্তরা ইতোমধ্যে রাজনীতির ময়দানে আছে। প্রয়োজনে সে বাবার দলের দায়িত্ব নেবে। এত লড়াই-সংগ্রামের পর যখন তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পেয়েছে, এই দল চলবে।’
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে আদালতের নির্দেশে ১৯ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। অসুস্থতার কারণে নিবন্ধন পাওয়ার পর দলের কোনো বৈঠক করতে পারেননি নাজমুল হুদা। এমনকি দল সংশ্লিষ্ট কাউকে কোনো নির্দেশনাও দিয়ে যেতে পারেননি। দলের কাঠামোও শক্তিশালী নয়।
উদ্ভূত বাস্তবতায় কে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বা দল কীভাবে চলবে, ঘুরেফিরে সেই আলোচনা সামনে আসছে। শেষ পর্যন্ত এটি নামসর্বস্ব দল হয়েই থাকবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া আক্কাস আলী খানও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। নাজমুল হুদার বড় মেয়ে অন্তরা সেলিম হুদা বলেছেন, তার বাবা এই দলের জন্য অনেক দিন সংগ্রাম করেছেন। তিনি বাবার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখবেন।
‘আগামী শুক্রবার প্রয়াত নাজমুল হুদার দোয়া মিলাদ শেষে দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বৈঠক করা হবে।’
সদ্যপ্রয়াত নাজমুল হুদা তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর। তার আগে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার পর আরও তিনটি দল গঠন করেছিলেন।
২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ)’ নামে দল গঠন করেন তিনি। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
নাজমুল হুদা ২০১৪ সালের ৭ মে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ নামে একটি জোট গঠন করেন। একই বছরের ২১ নভেম্বর তিনি ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি’ নামে একটি দল গঠন করেন। আরও একটি নতুন দল গঠন করেছিলেন এ রাজনীতিক।
নাজমুল হুদা সবশেষ ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে দলটি।
সে সময় নিবন্ধন না পাওয়ায় আইনি লড়াইয়ে যায় তৃণমূল বিএনপি। পরে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন দলটিকে নিবন্ধন দেয়।
নিবন্ধন পেলেও প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যানের মৃত্যু নতুন সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল বিএনপিকে। কেননা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় ৭১ সদস্যের কমিটির কথা বলা হলেও দুই-একজন ছাড়া কাউকে সক্রিয় দেখা যায়নি। নেই কোনো কার্যালয়।
রাজধানীর পল্টনে মেহেরবা প্লাজায় নাজমুল হুদার চেম্বারের একটি কক্ষে এতদিন দলীয় কাজ পরিচালনা করা হতো।
এদিকে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব পদে চারবার ব্যক্তি পরিবর্তন হলেও এখন পর্যন্ত কেউ স্থায়ী হতে পারেননি। বর্তমানে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আক্কাস আলী খান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দলটির কো-চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন কেবল নামেই পদে আছেন। তিনি বেশির ভাগ সময় থাকেন যশোর ও ঝিনাইদহে।
প্রতিষ্ঠাকালে দলটির মহাসচিব ছিলেন ডা. সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি চলে যাওয়ার পর চলচ্চিত্র অভিনেতা আহমেদ শরীফকে মহাসচিব করা হয়।
পরে ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুল দায়িত্ব নেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি অন্য দলে চলে গেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডা. শেখ হাবিবুর রহমানকে মহাসচিব করা হয়, কিন্তু তিনিও দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর আক্কাস আলী খানই হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলটির ‘সবেধন নীলমণি’।
নাজমুল হুদা ১৯৭৭ সালে জাগো দলে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে গঠন হওয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।
২০১০ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন নাজমুল হুদা। ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে বিএনপি ছেড়ে ২০১২ সালের ১০ আগস্ট তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ)।