চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ডে ভুয়া জন্ম সনদের অস্তিত্ব পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। শুরুতে আটক করা হয়েছিল ৬ জনকে। তাদের কাছে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হ্যাকাররা অবৈধ উপায়ে ৫ হাজারের বেশি ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির কথা জানিয়েছিল পুলিশ। তবে আটক ওই ৬ জনের কেউই হ্যাকার ছিল না।
সেই ৬ জনের মধ্যে দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আদালতে। তাদের জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যে আটঘাট বেঁধে নামে পুলিশ। সন্ধান পায় তিন হ্যাকারসহ একটি চক্রের।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে এই চক্রের ৩ হ্যাকারসহ ৫ সদস্যকে। এই চক্রের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরব রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত। আসল সার্ভারে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির এই কাজে চক্রের সদস্যরা যোগাযোগ করতো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে।
তাদের গ্রেপ্তারের পর রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নগর পুলিশের উপকমিশনার (কাউন্টার টেররিজম) লিয়াকত আলী খান।
নতুন গ্রেপ্তার ৬ জন হলেন- চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সরকারহাট গ্রামের সাগর আহমেদ জোভান, নড়াইলের লোহাগাড়া থানার দিঘুলিয়া ইউনিয়নের শেখ সেজান, কুমিল্লার তিতাস এলাকার বাসিন্দা কিন্তু বর্তমানে ঢাকা গ্রিন রোড এলাকার মেহেদী হাসান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থানার শাকিল হোসেন এবং ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার বাসিন্দা ও বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার মাসুদ রানা।
উপ-পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেনরিজম) লিয়াকত আলী খান জানান, চক্রটি আগ্রহীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে তিন ধাপে বানাতো জন্মনিবন্ধন সনদ। শুরুতে গ্রহীতা সংগ্রহ করতো জোভান। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করতো মেহেদী। গ্রাহক পাওয়ার পর তার নামের সাথে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতো হ্যাকারদের একজন। এরপর মূল হ্যাকার তথা সেজান অবৈধভাবে সার্ভারে প্রবেশ করে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করত। তৈরিকৃত সনদ প্রিন্ট করে সেখানে ভুয়া সিল-স্বাক্ষর দেয়ার পর পিডিএফ তৈরি করে গ্রাহককে সরবরাহ করত আরেকজন। এভাবেই চলতো প্রতারণা।
লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা অভিযানে শুরুতে মুরাদপুর থেকে জোভানকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম, নড়াইল, ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে টানা বিশেষ অভিযান চালিয়ে বাকিদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জালিয়াতি কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ২টি সিপিইউ, ২টি মনিটর, ৩টি ল্যাপটপ, ১টি ট্যাব, ১টি প্রিন্টার এবং ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
‘এছাড়াও মেহেদী হাসানকে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্মসনদ, নিবন্ধন অফিসের অফিসিয়াল সিল ও অফিসের প্যাডসহ আটক করা হয়।’