বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাছের উৎপাদন বেড়েছে হাকালুকি হাওরে

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১২:১৩

মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ২০২২ সালে সিলেটে আকস্মিক বন্যার কারণে হাওরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে, তবে হাওরে নানামুখী আগ্রাসনের কথা স্বীকার করে আগামীতে মৎস্য সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

হাকালুকি হাওর দেশের চারটি মাদার ফিসারিজের অন্যতম। প্রতি বছর এ হাওরের মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার মাছ। গত বছরের বন্যার পর এ হাকালুকি হাওরে মাছের গড় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ থেকে ৭ শতাংশ। এ বছর এখনও মাছ ধরা শেষ না হলেও মাছের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এবার মাছ গত বছরের তুলনায় ৪ হাজার টন বাড়বে বলে আশাবাদী মৎস্য বিভাগ।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে এ হাওরে মাছের গড় উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার টন। কিন্তু ২০১৭ সালের বন্যার পরই মাছের উৎপাদন নতুন রেকর্ড করে ১৭ হাজার টনে দাঁড়ায়। এরপর আবারও কমে যায় উৎপাদন। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে জেলায় মাছের উৎপাদন ছিল ৪৮ হাজার ১১২ টন। এরমধ্যে হাওরে উৎপাদন ১০ হাজার ২৭০ টন।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৫১৮ টন এরমধ্যে হাওরে উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৯৮১ টন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫১ হাজার ৫৫২ টন। এরমধ্যে হাওরে ২০ হাজার ৯৭৭ টন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫২ হাজার ৩২৫ টন। এরমধ্যে হাওরে উৎপাদন হয় ২৪ হাজার ২৪০ টন। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে হাওরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার টন এবং জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৩ হাজার ১০৯ টন নির্ধারণ করা হয়েছে।

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছরে ৫ থেকে ৭ শতাংশ উৎপাদন ইতোমধ্যে হয়েছে বছর শেষে, যা ১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

হাকালুকি হাওর ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে হাকালুকির বিভিন্ন বিলে মাছ ধরার উৎসব চলছে। বিভিন্ন সাইজের মাছের পাশাপাশি ২০ থেকে ৩০ কেজি ওজনের মাছও ধরা পড়ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা কিনছেন লাখ লাখ টাকার মাছ।

ব্যবসায়ীরা জানান, একদিনে কোটি টাকার ওপরে মাছ বিক্রি হয়েছে। ধরা পড়েছে বড় বড় মাছ।

হাওরের জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিলের পাড়ে অস্থায়ী নিলাম কেন্দ্র স্থাপন করেছেন ইজারাদাররা। সেখানে ভোর থেকে ব্যবসায়ীরা মাছ কেনার জন্য ভিড় করছেন। ইজারাদারদের অধীনে জেলেরা সারাদিন বিলে জাল ফেলে মাছ ধরছেন। কিছুক্ষণ পরপর সেই মাছ নৌকায় করে ঘাটের নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট ও বড় মাছ আলাদা করে বিক্রি করা হচ্ছে ঘাটে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, পূর্বে এ হাওরে ছিল ২৩৮টি বিল, বর্তমানে রয়েছে প্রায় ২০০টি। অর্থাৎ ৩৮টি বিল ইতোমধ্যে ভরাট হয়েছে অথবা ছোট হওয়ায় অন্য বিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, এ বছর বড় বড় রুই, বোয়াল, আইড়, কমন কার্প, মৃগেল মাছ বেশি হলেও অন্য জাতের দেশি মাছও ধরা পড়ছে। চাপিলা, টেংরা, মলা ও চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের প্রচুর ছোট মাছ ধরা পড়ছে। ছোট ও বড় মাছ পৃথকভাবে ঘাটে বিক্রি হচ্ছে। আছে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছও।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্ট নিরঞ্জন ঘোষ জানান, সারাদেশে হাকালুকি হাওরের মাছ বিক্রি করেন। মাছের সাইজ ও জাত অনুসারে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত মাছের কেজি বিক্রি হয়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটি টাকার হাওরের মাছ বিক্রি হয়।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হাকালুকি হাওরের মাছ বিক্রি হয় কোটি টাকার ওপর। ছবি: নিউজবাংলা

বিল ইজারাদার মো. জমির আলী জানান, ২৮ হাজার হেক্টরের বিশাল হাওরে ছোটবড় বিল রয়েছে ২৩৮টি। তবে নানামুখী আগ্রাসনের ফলে হাওর হারাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ ও বিলগুলো ভরাট হচ্ছে দিনেদিনে। যদি হাওরকে সঠিকভাবে রক্ষা করা যেত মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ হতো।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ২০২২ সালে সিলেটে আকস্মিক বন্যার কারণে এ বছর হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে হাওরে নানামুখী আগ্রাসনের কথা স্বীকার করে আগামীতে মৎস্য সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

তিনি আরও জানান, ২০২১-২০২২ সালে মৌলভীবাজারে ৫২ হাজার ৩২৫ টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ১০৯ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের মত এ বছরও দেখা মিলছে বিপন্নপ্রায় অনেক প্রজাতির মাছ। যার মধ্যে সংকটাপন্ন ১৩ প্রজাতির মাছ এবং চরম বিপন্ন ৮ প্রজাতির মাছ রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর