যতদূর চোখ যায় লক্ষ্মীপুরের সদর, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় কৃষকের চাষ করা সরিষার মাঠ হলুদ রঙের ছোঁয়ায় ভরে গেছে। ফুলে ফুলে সুশোভিত পুরো মাঠ। মৌ মৌ গন্ধে ফুলের ডগায় দোল খাচ্ছে মৌমাছিরা। এ যেন এক ভিন্ন আমেজ।
সরিষা চাষে খরচ এবং শ্রম কম লাগে। উভয়ই সুবিধা থাকায় সরিষা চাষে দিন দিন চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। আর এটি একটি লাভজনক ফসল। এবার জেলায় এক হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরকারিভাবে বীজ এবং সার সংগ্রহ করে এসব সরিষা আবাদ করেছে চাষিরা। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলার রায়পুর উপজেলায়, যার পরিমাণ ৭৯০ হেক্টর।
এ ছাড়া সদরে আবাদ হয়েছে ৩৫০, কমলনগরে ১৮০ হেক্টর, রামগঞ্জে ১০০ হেক্টর ও রামগতিতে ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সয়াল্যান্ড হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের মাটিতে এবার সরিষা ভালো ফলনের আশা আছে বলে জানান কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার জেলায় সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩৬ হাজার টন।
সরিষা চাষিদের সর্বাত্মক পরামর্শ দিয়েছে লক্ষ্মীপুর কৃষি বিভাগ। এ ছাড়া সরকারি প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে চাষিদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, বিগত মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবার সরিষার আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষার আবাদ বাড়াতে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৪ হাজার ৮০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষা বীজ, ড্যাপ সার ১০ কেজি ও এমওপি সার ১০ কেজি করে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাও ১০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষার বীজ দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন ও চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক কবির, সিরাজ মোল্লা, মোস্তফা কাজী, সফিক উল্যাসহ কয়েকজন জানান, সরিষা লাভজনক ফসল। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ক্ষেত থেকে ফলন পাওয়া যায়।
আমন ধান কাটার পরপরই কৃষকরা সরিষার বীজ জমিতে রোপণ করেছেন। সরিষা উঠে গেলে ওই জমিতে সয়াবিন বা ডাল জাতীয় শষ্য আবাদ করতে পারবেন। তাই এ সময়টাতে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদকে তারা ভালো মনে করছেন। চাষাবাদে তারা বীজ এবং সার সরকারিভাবে পেয়েছেন।
সদরের সরিষা চাষি আব্দুল্যাহ জানান, ৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৪০ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি সরিষা গাছে ফুল ফুটেছে। একবারে মাটি ছড়িয়ে বীজ ফেলার পর তেমন কোনো খরচ নাই। আশা করা যায় এবার সরিষার ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে।
একইসঙ্গে কৃষক আব্দুর রহিম জানান, তিনি প্রায় দুই শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো হলে তিনিও ভালো ফলনের আশা করছেন।
এ ছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহী করে তোলা হচ্ছে। এতে ফুলে ফুলে শোভা পাচ্ছে সরিষার মাঠ। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সরিষা ক্ষেত দেখতে আসছেন এবং কেউ কেউ নিজেদের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন। আবার কেউ কেউ ভিডিও বানাচ্ছেন। পুরো দিন কেটে দেয় সরিষার মাঠে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর বিগত সময়ের চেয়ে সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ। চাষিদের পরামর্শ এবং সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তারা যেন সহজে লাভবান হতে পারে সরকার সেইভাবে আমাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।
‘সরকারের পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলার ১০০ কৃষকের মধ্যে বীজ সরবরাহ করেছি। তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। চাষি যত সমস্যা থাকবে সকল সমস্যার সমাধানসহ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য আমরা যথাযথ প্রদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করছি এবার সরিষা চাষিরা বিগত সময়ের চেয়ে ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবে।’