কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে গত রোববার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা হলেন- ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং পরিসংসখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র্যাগিং করে তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়,তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটা সম্ভব হয়নি।
পরদিন রোববার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই ছাত্রীকে জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। র্যাগিংয়ের ঘটনার কথা কাউকে জানালে ওই ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তারা। ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, গত রোববার আমার ওপর তারা অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। জীবন বাঁচাতে পরদিন সোমবার ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে আসি। আমি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
নির্যাতনকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী বলেন, অভিযোগকারী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। সে তার এক ভাইকে দিয়ে তাবাসসুমকে হুমকি দিয়েছিল। সে আমার নাম করে আমাকেই ভয় দেখাচ্ছিলো। এজন্য তাকে ‘বোঝানো’ হয়েছে। তবে তার সঙ্গে আমরা এমন ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাইনি।বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনা যদি সত্য হয় এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে তার শাস্তির দাবি জানাব। পাশাপাশি আমরা সাংগঠনিকভাবেও ব্যবস্থা নেব।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ঝামেলা হওয়ার পর আমরা উভয় পক্ষকে ডেকেছিলাম। অভিযোগকারী তার বোনের পরিচিত একজনের রুমে থাকছে। যেহেতু সে আবাসিক শিক্ষার্থী না তাই বলেছিলাম কয়েকদিন হলের বাইরে থাকতে। পরে পরিবারের অবস্থা শুনে হলেই থাকতে বলেছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদত হোসেন আজাদ বলেন, রোববার হল প্রভোস্ট আমাকে বিষয়টি জানানোর পর দুইজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠিয়েছিলাম। তারা আর প্রভোস্ট মিলে বিষয়টি সমাধান করে এসেছিল। আমরা বসে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই র্যাগিংয়ের অনুমতি নেই। আমি নীতিগতভাবে এটা কখনো সমর্থন করি না। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানাভাবে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে বিভিন্ন রকম পোস্ট করছে।