বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপিকে দ্রুতই নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দলটি প্রতীক হিসেবে পাচ্ছে ‘সোনালী আঁশ’। তবে অন্য দলগুলোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সাংবিধানিক এই সংস্থা।
আপিল বিভাগের আদেশের পর তৃণমূল বিএনপির বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান।
২০০৮ সাল থেকে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে ৩৯টি দল। তৃণমূল বিএনপি নিবন্ধন পেলে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়াবে ৪০। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ইসি।
মো. আলমগীর বলেন, ‘অ্যাপিলেট ডিভিশন থেকে তাদের (তৃণমূল বিএনপি) বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার জন্য। যেহেতু সর্বোচ্চ আদালত থেকে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেহেতু আমরা দিতে বাধ্য। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত সম্ভব দলটিকে নিবন্ধন দেয়া হবে।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন নাজমুল হুদা। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন হুদা। পরে সেই দল থেকে তাকেই বহিষ্কার করে ২০১৪ সালে এমপি হন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) ও বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। সাবেক এই বিএনপি নেতা। সেখানে ব্যর্থ হয়ে গঠন করেন নতুন দল ‘তৃণমূল বিএনপি’।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদা কমিশনের সময় আবেদন করেছিল দলটি। তখন নিবন্ধন মেলেনি। পরে আদালতের দ্বারস্থ হন নাজমুল হুদা।
এ বিষয়ে জানতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তখন আসলে কিছু কাগজ শর্ট (কমতি) ছিল। তাই তাদের নিবন্ধন দেয়া হয়নি। এখন তো কোর্ট তাদের নিবন্ধন দিতে বলছে।’
যত দ্রুত সম্ভব দলটিকে (তৃণমূল বিএনপি) নিবন্ধন দেওয়া হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘দেরি করার তো সুযোগ নেই। আদালত নির্দেশনা দেয়ার পর তো আর মাঠে খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। কেননা আদালতের নির্দেশ আমরা পালন করতে বাধ্য। আদালত নিশ্চয় সেগুলোর প্রমাণ পেয়েছে।’
আদালত তাদের প্রতীকও নির্ধারণ করে দিয়েছে বলে জানান এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘দলটির প্রতীক হবে সোনালী আঁশ। নিবন্ধিত দল হিসেবে গেজেট প্রকাশের পরই তা ইসির তালিকাভুক্ত হবে।’
গণসংহতি আন্দোলন ও ইনিসানিয়াত বিপ্লব নামে দুটি দলের বিষয়ে আদালতের সর্বোচ্চ আদেশ রয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে নতুন দলগুলোর কাছে ২৬ মে আবেদন আহ্বান করে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন।
অবশ্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী অনুরোধ করে আসার পর নতুন দলের নিবন্ধনের সময় দুই মাস বাড়ায় কমিশন।
নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর জানান, ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। পাঁচটি দল নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। দু’টি দল আবেদন প্রত্যাহার করেছে।