বগুড়ার কাহালু রেল স্টেশনের পাশের একটি চায়ের দোকানে লোকজনের মধ্যে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছিল। এর মাঝে কথা উঠল দুই আসনেরই প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে নিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল খানের মতে, মন্দের ভালো হিরো আলম। তিনি ভালোও নন, খারাপ বলা যাবে না।
ডিশ ব্যবসায়ী থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়া হিরো আলম একতারা প্রতীক নিয়ে বগুড়ার ৪ ও ৬ আসনে উপনির্বাচনে লড়বেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই যুবককে নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা দুটোই আছে। একই সঙ্গে হিরো আলমের নির্বাচনী প্রচারণাকে তার বাণিজ্যিক কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেক ভোটার।
হিরো আলমের ঘনিষ্ঠজন বাবুল খান বলেন, ‘সংসদে ৩০০ সদস্য থাকেন। এর মধ্যে অনেকে আছেন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঠিক মতো বলতে পারেন না। সেই ক্ষেত্রে হিরো আলম তৃণমূল থেকে উঠে আসছে, তিনি গরীব মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইয়াং জেনারেশনের কাছে হিরো আলম নট ব্যাড। ভালোও বলা যাবে না। খারাপও বলা যাবে না।’
চায়ের দোকানের পাশেই রেজাউল করিমের পানের দোকান। তিনি বলেন, ‘হিরো আলম আমাদের কাছে এসেছিলেন। তিনি গরীব-দুখী মানুষদের ভালোবেসে উন্নয়ন করবেন।’
রবিউল ইসলাম নামে আরেক ভোটার বলেন, ‘আমরা হিরো আলমকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই। কারণ হিরো আলম এমন একটা মানুষ, তিনি আমাদের উন্নয়ন করবেই। যেটা এর আগে অন্য কেউ এমপি করেননি।’
কিন্তু হিরো আলম যদি এমপি হওয়ার পর উন্নয়ন না করে তখন কি করবেন? এ প্রশ্নে রবিউল বলেন, ‘আমরা তিন মাস তাকে দেখব। যদি উন্নয়ন না করেন, তাহলে বাতিল করে দেব। কয়েকদিন পরেই তো আরেকটা নির্বাচন আছে।’
হিরো আলমের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কাহালু বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল বারী বলেন, ‘নির্বাচন করতেছে, কিন্তু সে নিজেই তো যোগ্য না। সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কি কি কাজ সেটি তো সে বুঝে না। ইয়াং জেনারেশনদের মধ্যে কিছু হিরো আলমকে নিয়ে আমোদ করছে। এর বেশি কিছু না।’
কাহালু উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন কবিরাজও মনে করেন যে, নির্বাচনের চেয়ে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের দিকে আগ্রহ বেশি হিরো আলমের।
কামাল উদ্দিন কবিরাজ বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোয়ালিটি নিম্নগামী হচ্ছে। এটা শুভ সংকেত নয়। যদিও পার্লামেন্টে সবাই নির্বাচন করতে পারে।’এদিকে হিরো আলমকে নিয়ে ভিন্ন ধারণা পোষণ করছেন বগুড়া-৬ আসনের অনেকে। তারা মনে করছেন যে, হিরো আলম নির্বাচনের পাশাপাশি ভিডিও কনটেন্ট দিয়ে বাণিজ্যিক সুবিধা নিচ্ছেন। অবশ্য তাদের এমন ধারণা অমূলক নয়। কারণ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিরো আলমের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ইউটিউবার যুক্ত হয়েছেন। যে কোনো প্রচারণায় তারা সঙ্গে থাকেন। এসব নির্বাচনী প্রচারণার ভিডিও ইউটিউবে, ফেসবুকে প্রচার করে প্রচুর ভিউ আসে। এতে অর্থ উপার্জন হয়।
হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী বগুড়া-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল বলেন,‘ তিনি একজন নাগরিক। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতেই পারেন। এখানে রাজনৈতিক ব্যর্থতা আমি বলবো না, তবে রাজনৈতিক চর্চার একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা থেকে হিরো আলমরা গুরুত্বপূর্ণ এই পদগুলোয় আসছেন। যেমনটি এসেছেন মমতাজ। অথবা এমন আরও কয়েকজন।’বগুড়া জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, ‘হিরো আলমমের রাজনৈতিক দর্শন নেই, অর্থনৈতিক মুক্তির কোনো নির্দেশনা নেই। হিরো আলম তার অদম্য ইচ্ছা দিয়ে তৃণমূল থেকে উঠে এসেছে। কিন্তু তার গণমানুষের জন্য কোনো কর্মসূচি না থাকে তাহলে সংসদে গিয়ে কি ভূমিকা রাখবেন?’বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি ও ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিস লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন।
ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। এর আগে ২০১৮ সালে তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে দুপুরের আগে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ভোট বর্জন করেন তিনি।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার ৪ ও ৬ আসনে উপনির্বাচন হবে। এতে একতারা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন হিরো আলম।
দুই আসনে নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের হলফনামায় দেখা গেছে চার বছরের ব্যবধানে হিরো আলম কোটিপতি হয়েছেন। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেখিয়েছেন ৫৫ লাখ টাকা। যেখানে ২০১৮ সালে তার কোনো সঞ্চয়পত্র ছিল না। এছাড়া এসময়ের মধ্যে তার কৃষি জমি ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। স্বর্ণলঙ্কারও বেড়েছে ১০ গুণ, তবে হলফনামায় দেয়া তথ্যে কোটিপতি হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন হিরো আলম। তার দাবি, আইনজীবী তার ভুল হলফনামা তৈরি করেছেন।