মাদারীপুরে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে তর্কের জেরে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
দফায় দফায় সদর উপজেলার নয়াচর-মধ্য খাগদীর সীমান্তবর্তী আব্দুল মন্নান সেতুর দুইপ্রান্তে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আটকরা হলেন নয়াচর এলাকার মিঠু মোল্লা, একই গ্রামের রাসেল মোল্লা ও রাসেদ মোল্লা, হৃদয় মীর এবং অনিক চৌকিদার।
আহতদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, জেলার গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আবুল কাশেম, চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. রোমান, সদর থানার কনস্টেবল মো. সাগর, নয়াচর এলাকার সাব্বির খাঁ, জয়নাল মুনশি, রাজু মোল্লা, আল-আমিন। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মধ্য খাগদী এলাকার টিটু খানের ছেলে মনা খানের সঙ্গে নয়াচর এলাকার কুদ্দুস ফরাজির ছেলে ফরিদ ফরাজির কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে, দুজনের মধ্যে হাতাহাতি থেকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। এরই জেরে রাতে দুপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পরে আব্দুল মন্নান সেতুর দুইপ্রান্তে অবস্থান নেয় পুলিশ। ৭১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতল ও বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
অবস্থার অবনতি হলে সদর হাসপাতাল থেকে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ‘মারামারির ঘটনায় বেশ কয়েকজন সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলেও গেছেন। এর মধ্যে চার জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী বাঁধন মজুমদার বলেন, ‘সেতুর দুইপ্রান্তে দুই গ্রামের মানুষ জড়ো হয়। প্রথমে কিশোররা মারামারি করলেও পরে যুবকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেতুর দুই পাড়েই ইটপাটকেল ছড়াছড়ি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটে।’
হামলায় আহত চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. রোমান বলেন, ‘ফুটবল খেলা নিয়ে মনা খান নামে এক কিশোরকে মারধরকে কেন্দ্র করেই মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত। প্রথমে আমরা দুপক্ষের লোকজনকে সেতুর দুই পাড় থেকে সরিয়ে দেই। পরে সেতুর দুইপ্রান্তেই অসংখ্য সংখ্যক লোকজন জড়ো হয়ে ইটপাটকেল ছোঁড়া শুরু করে। পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’
ওসি মনোয়ার বলেন, ‘দুপক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পাঁচ জন পুলিশ আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে আটক করেছে। ওই এলাকায় ফের সংঘাত এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি আপতত স্বাভাবিক। তবে সংঘর্ষের মূলে যারা রয়েছে তাদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।’