বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করেছে। আর তা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিবৃতিতে প্রমাণ হয়েছে।’
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা আনন্দিত নই, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত সরকারের বিরুদ্ধে। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, শনিবার ঢাকা সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু। রোববার মধ্যরাতে ঢাকা ছাড়ার আগে এখানে তিনি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ডোনাল্ড লুর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের যৌথ ব্রিফিংয়েও জানানো হয়।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ জটিল।
ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠকের পরদিন সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি আশা করছেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা অচিরেই উঠে যাবে।
মঙ্গলবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, ডোনাল্ড লু র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সময়সীমা নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া তার দল নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দিয়ে যে বাজে ভাষায় কথা বলে তা জঘন্য ও অগণতান্ত্রিক। বিরোধী দলের আন্দোলনে জনগণের ঢল দেখে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে।‘
বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একই দিনে কর্মসূচি দিলে কোনো পরিস্থিতির তৈরি হলে এর দায় আওয়ামী লীগকে নিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার তাদের অবৈধ উপায়ে দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নজরদারিতে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়িপাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। এই ভয়াবহ নিবর্তনমূলক আইন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অগণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে ভূমিকা রাখছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই চরম নির্বতনমূলক আইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদকর্মী, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে।’
অবিলম্বে এই আইনের আওতায় বন্দিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান তিনি।
বিরোধী দলকে দমন করতে ইসরায়েল থেকে নজরদারির প্রযুক্তি কেনা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদারি করার জন্য ইসরায়েলি এক কোম্পানির কাছ থেকে প্রযুক্তি কেনা হয়েছে বলে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগের।
‘আমরা মনে করি বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না, জনগণের সমর্থনেই ক্ষমতায় যেতে হবে। নিষেধাজ্ঞা আসা লজ্জার, নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত সরকারের ওপর। কারণ তাদের নির্দেশেই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে।’