ক্যানসার আক্রান্ত এক রোগীকে চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তার স্বজনরা, তবে হাসপাতালে আর যাওয়া হলো না; শরীয়তপুরের জাজিরায় সড়কে থেমে গেল তাদের জীবন।
মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার নাওডোবা সেতুর কাছে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে ওই অ্যাম্বুলেন্সের ছয় আরোহীর প্রত্যেকেই নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন পটুয়াখালীর বাউফলের লুৎফুন্নাহার লিমা, তার মা জাহানারা বেগম, চাচাতো ভাই ফজলে রাব্বী, অ্যাম্বুলেন্স চালক খুলনার দিঘলিয়ার রবিউল ইসলাম, মাদারীপুরের মস্তফাপুরের জিলানী মৃধা ও বরিশালের আগৈলঝাড়ার মাসুদ রানা।
নিহত লিমার বোন শিল্পী আকতার বলেন, ‘লিমা দীর্ঘদিন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে অধ্যয়নরত ছিলো। মায়ের অসুস্থতার খবরে গত বছর সে দেশে আসে। এক বছর যাবত মায়ের চিকিৎসার জন্য দেশেই অবস্থান করছিল।
‘গতরাতে মায়ের শরীরের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে মা-বোন দুজনকেই হারাতে হলো।’
স্বজনদের বরাতে পুলিশ জানায়, ক্যানসার আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ মা জাহানারা বেগমকে নিয়ে পটুয়াখালী থেকে বরিশালের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসেন লুৎফুন্নাহার লিমা। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ঢাকায় রওনা হন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন আরও এক আত্মীয়, একজন চিকিৎসা সহকারী, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও চালকের সহকারী।
পুলিশ জানায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা সেতু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি পেছন থেকে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে দুমড়েমুচড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ঘটনাস্থলেই নিহত হন এতে থাকা ছয়জন।
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স চালক দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে ক্লান্ত থাকতে পারেন। দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। পেছন থেকে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাকে ধাক্কা দিলে এটি ট্রাকের নিচে পিষ্ট হয়।’
তিনি বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। স্বজনরা এসে শনাক্ত করে মরদেহ নিয়ে গেছে।’
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।’