সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী পক্ষের নেতারা। এর জের ধরেই শুক্রবার ক্যাম্পাসে সংগঠনের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় বলে দাবি তাদের। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে শুক্রবার বিকেলে সংঘর্ষে জড়ায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এই সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ওমর ফারুককে শুক্রবার রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়।
গত বছরের ২৯ জুলাই আশিকুর রহমান আশিককে সভাপতি ও মো. এমাদুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সিকৃবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রান্থ রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ না করেই একটি বিভাগের কর্মিসভার আয়োজন করেন, যা গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। এছাড়া সাধারণ সভা না ডেকেই তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কর্মিসভা আহ্বান করেন।
‘ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের কারণেই শুক্রবারের সংঘাতের ঘটনা ঘটে।’
প্রান্থ বলেন, ‘কর্মিসভার খবর পেয়ে শুক্রবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে গেলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
তবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার সিকৃবি ছাত্রলীগ সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্র মেনেই কার্যক্রম চালাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলছে। ইউনিট কমিটিগুলোও চাঙা করার চেষ্টা করছি। সে লক্ষ্যেই কর্মিসভা ডাকা হয়েছিল।’
সাধারণ সভা ডেকে কর্মিসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সাধারণ সভা ডাকা না হলেও কমিটির সব সদস্যকে কর্মিসভার বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও অনুমতি নেয়া হয়েছে।
‘বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারীরা শুক্রবার কর্মিসভায় হামলা চালায়। তারা চায় না বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ শক্তিশালী হোক। এর পেছনে বাইরের অনেকেরও ইন্ধন রয়েছে।’
ওমর ফারুককে ঢাকায় প্রেরণ
এদিকে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত ওমর ফারুকের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এর আগে শুক্রবার রাতেই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে শনিবার দুপুরে তার চোখ অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সে এখন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা তার নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।’
সংঘর্ষে আহত অন্যদের আঘাত গুরুতর নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করে সংঘর্ষের কারণ খুঁজে বের করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শনিবার ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান প্রক্টর।
আহত ওমর ফারুকের একাধিক সহপাঠী জানান, ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ কর্মী। শুক্রবার সংঘর্ষকালে ইটের টুকরো ওমর ফারুকের চোখে এসে পড়ে। এতে তার চোখের মণি ফেটে যায়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের কর্মিসভা আহ্বান করা হয়। তবে ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা এতে আপত্তি জানান। শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা কর্মিসভাস্থলের দিকে গেলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুপক্ষই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পরস্পরকে ধাওয়া করে। এ সময় ৬ জন আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শরীফ হোসাইন, সাব্বির মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন এবং আকাশ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কর্মিসভায় হামলা করা হয়েছে। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের প্রতিহত করে।
এদিকে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষকেই হলে সশস্ত্র অবস্থান নিতে দেখা যায়।