কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক যুবক নিহত হওয়ার পৌনে চার বছর পর নেত্রকোণা মডেল থানার সাবেক দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন খান ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন।নেত্রকোণা শহরের হোসেনপুর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ আবেদন দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ২১ মে রাতে তার ভাই আমজাদ হোসেন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে দাবি করে পুলিশ।
নিহত আমজাদ হোসেন জেলা শহরের হোসেনপুর এলাকার মৃত আলী হোসাইনের ছেলে। আমজাদ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আর অভিযুক্ত ওসি বোরহান উদ্দিন বর্তমানে কেন্দুয়া সার্কেল কার্যালয়ে পরিদর্শক পদে এবং মামুন খুলনা রেঞ্জে এসআই পদে কর্মরত আছেন।
বাদী দেলোয়ার হোসেন আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘২০১৮ সালের ২১ মে রাত ৩টার দিকে নেত্রকোণা মডেল থানার তৎকালীন ওসি বোরহান উদ্দিন ও এসআই মামুনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য আমজাদকে তার বসতঘর থেকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নেন। পরে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে সদর উপজেলার বড়ওয়ারী সেতু এলাকায় মাদক উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।’
দেলোয়ার দাবি করেন, ‘আমার ভাইকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখিত আসামিরা তখন নেত্রকোণা মডেল থানায় কর্মরত থাকায় মামলা করতে সাহস পাইনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহত আমজাদ খুন, অস্ত্র, বিস্ফোরক, দ্রুত বিচার, চুরি, মাদকসহ ১৩টি মামলার আসামি ছিল। ঘটনার দিন মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্য মতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৫০০ গ্রাম হেরোইন, ৩০৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট, দুটি কার্তুজ ও একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলাকালে আমজাদ পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।’
নেত্রকোণা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমজাদ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তাকে অনেক মামলায় জড়িয়েছিল পুলিশ। কিন্তু আমাদের জানা মতে তিনি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আর যদি জড়িত থাকতেন, তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার করা যেত। কিন্তু তা না করে তাকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা রীতিমতো সন্ত্রাসের শামিল। এটি দুঃখজনক।’
বাদীর আইনজীবী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন বলেন, ‘মামলার আবেদনে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর ১৫ (২) ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে শুনানিও হয়েছে। তবে বিচারক পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
আইনজীবী আরিফা জেসমিনের সঙ্গে অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমানসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী মামলাটির ক্ষেত্রে বাদীকে আইনগত সহায়তা দিচ্ছেন।