বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাতার থেকে বিশত কারখানা যেভাবে বগুড়ায়

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৩:৫৪

বিশেষ আয়োজন এবং বিয়ের মতো বড় অনুষ্ঠানে বিশত পরেন সৌদি আরব ও কাতারের পুরুষরা। কারও গায়ে তা চড়িয়ে দেয়ার মানে হলো ওই ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া। এটি মূলত ধর্মনিরপেক্ষ একটি পোশাক।

কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে এবারের চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। খেলার সমাপনীতে শিরোপাজয়ীদের মহানায়ক লিওনেল মেসিকে ঐতিহ্যবাহী এক পোশাক পরিয়ে দেন দেশটির আমির। আরব বিশ্বের পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী এই পোশাকের নাম ‘বিশত’। এই বিশেষ পোশাকের ছবির রেশ ছড়িয়েছে দেশের বগুড়ায়ও। কারণ বগুড়ার এক পল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হচ্ছে আরবীয় পোশাক ‘বিশত’। যেগুলো রপ্তানি করা হয় কাতার ও সৌদি আরবে।

বিশেষ আয়োজন এবং বিয়ের মতো বড় অনুষ্ঠানে বিশত পরেন সৌদি আরব ও কাতারের পুরুষরা। কারও গায়ে তা চড়িয়ে দেয়ার মানে হলো ওই ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া। এটি মূলত ধর্মনিরপেক্ষ একটি পোশাক।

মেসিকে পরিয়ে দেয়া বিশতটি ‘বিশত আল সালেম’ নামে এক কোম্পানির বলে দাবি করেছেন বগুড়া সদরের শিকারপুরের রবিউল ইসলাম রনি। ‘বিশত আল নূর’ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তিনি। রবিউলের দাবি, আল সালেম কোম্পানিতেই পাঠানো হয় বগুড়ার মানুষের হাতে তৈরি পোশাকটি।

এক যুগ আগে নূর আলম নামের এক ব্যক্তির হাতে গড়ে ওঠে ‘বিশত আল নূর’। রবিউল প্রতিষ্ঠানটির মালিকের জামাই। তিনি কাতারে ব্যবসা দেখাশোনা করেন।

জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে যান নূর আলম। সেখানে বিশত তৈরির কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। পাতলা কাপড়ে বিভিন্ন ধরনের সুতা দিয়ে নকশা করা তার কাজ ছিল।

সৌদিতে কাজ করার কয়েক বছর পর নূর কাতারে যান। সেখানেও নূর এই বিশেষ ধরনের পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন। পরে সেখানকার মালিককে প্রস্তাব দেন, এমন একটি কারখানা তিনি বাংলাদেশে করতে চান। দেশে কম মূল্যের শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে চান। তখন তার কাতারের তৎকালীন মালিক রাজি হলে দেশে এসে নূর ১০ জন শ্রমিক নিয়ে বিশত তৈরির কাজ শুরু করেন।

বগুড়ার কারখানায় তৈরি বিশত। ছবি: নিউজবাংলা

নূর ও তার জামাই রবিউল বেশির ভাগ সময় কাতার কিংবা সৌদি আরবে থাকেন। সেখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দোকানে তারা দেশে তৈরি বিশত পাইকারি মূল্য জোগান দেন।

বিশত আল নূর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মানিক হোসেন জানান, দেশে নূর আলমের ব্যবসা দেখাশোনা করেন তিনি।

মানিক জানান, এই পোশাকের বাংলাদেশে কোনো চাহিদা নেই। সব পোশাকই যায় সৌদি আরবে কিংবা কাতারে। দামও খুব ভালো। সেখানে প্রতিটি বিশত নকশাভেদে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। আবার এই পোশাক তৈরির সব কাঁচামালই আমদানি করতে হয় সৌদি কিংবা কাতার থেকে। সুই, সুতা থেকে শুরু করে কাপড় সবই আসে সেখান থেকে।

তিনি আরও জানান, ঈদের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসবে এ পোশাকের ব্যবহারের রীতি সবচেয়ে বেশি। বিশত তৈরিতে স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রলেপযুক্ত সুতা, জরি ও নরম পাতলা কাপড় ব্যবহার করা হয়। এ পণ্যগুলো সৌদি আরব, কাতার ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। এমনকি এশিয়ার দেশ জাপান থেকেও আনা হয় এসব পণ্য।

ব্যবসা সম্পর্কে মানিক বলেন, এই কারখানা থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়।

বিশত আল নূর কারখানায় স্থানীয় নারী-পুরুষ মিলে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বিশেষ এই পোশাক তৈরি করে শ্রমিকরা অনেকে সচ্ছলও হয়েছেন। অনেকে নিজেদের পড়ালেখার খরচ এখান থেকেই বহন করছেন।

কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপড় থেকে পূর্ণ একটি বিশত তৈরি হয় ছয়টি ধাপে। ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক তৈরি করতে একজন শ্রমিকের অন্তত সাত দিন সময় লাগে। প্রথমে কাপড় কেটে নিয়ে সেখানে নকশা শুরু করতে হয়। নকশার প্রথম ধাপকে বলা হয় হেলা। এরপর রয়েছে তুক্ত স্রিপ, ব্রুজ, মাসকার, বরদাক ও সিলালা নামে ধাপ। ধাপগুলো শেষ হলেই পূর্ণতা পায় একটি বিশত।

এসব কাজের মধ্যে একটি ধাপ ‘মাসকারে’ বিশেষভাবে দক্ষ সাকিব হোসেন। গত তিন বছরে অন্যান্য কাজও শিখেছেন তিনি। এর আগে ছিলেন বাসের হেলপার। এখন পুরোদমে বিশত তৈরি করছেন।

তিনি জানান, প্রথম মাসেই আয় হয় ১০ হাজার টাকা।

এখন এই পোশাক কারখানায় কাজ করে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করছেন সাকিব।

বগুড়ার কারখানায় বিশত তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: নিউজবাংলা

কাতার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রবিউল ইসলাম রনির সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি বলেন, ‘মেসিকে কাতারের বিখ্যাত বিশত আল সালেম কোম্পানির বিশত পরিয়ে দিয়েছেন দেশটির আমির। এই কোম্পানিতেই আমরা নিজেদের তৈরি বিশত সরবরাহ করি।’ফুটবল বিশ্বকাপে বিশতের ব্যবসা সম্পর্কে রবিউল বলেন, ‘কাতারে সাধারণত প্রতিবছর আমাদের তৈরি অন্তত ৮০ লাখ টাকার বিশত বিক্রি হয়। এবার বিশ্বকাপ উপলক্ষে বেচাকেনা ভালো হয়েছে। তবে আমাদের আশা আরও বেশি ছিল।’

বিশত তৈরিতে কিছু সংকটের কথাও বলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মানিক হোসেন। তিনি বলেন, পোশাকটি তৈরির কাঁচামাল কাতার থেকে আমদানি করতে হয়। কারণ এই মানের সুতা বাংলাদেশে বা তার আশপাশে নেই। এই সুতা বা অন্য কাঁচামাল আমদানিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এগুলো সহজ করা গেলে আমাদের জন্য ভালো হতো। একই সঙ্গে দেশের বেকার নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজ শেখানো গেলে তাদের অর্থ উপার্জনের পথ তৈরি হতো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বগুড়া কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের ছোট পরিসরে ঋণ দেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এই পোশাক কারখানাটি পরিদর্শন করে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো সহযোগিতা লাগলে সেটিও দেখা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর