শেরপুর সদর উপজেলার ৬ নম্বর চরের ষাটোর্ধ্ব আবদুল জব্বার ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে ৫০ শতাংশ জমিতে বেগুনের চাষ করে বিপাকে পড়েছেন।
সার, তেল, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেশি থাকায় এবার বেগুনের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
তার মতো অনেক কৃষকই এখন বেগুন চাষ করে বিপাকে আছেন।
কৃষক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমার চার ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। ছোট ছেলেডারে নিয়ে কষ্টে সংসার চালাই।
‘এবার বেগুনের চাষ করলাম। তেল, সারের দাম বেশি। কত কষ্ট করলাম। মনে করলাম বেগুন বেইচা ঋণ পরিশোধ করব। কিন্তু দাম না থাকায় এহন খরচের টাকাই তো উঠব না, ঋণ পরিশোধ করব কেমনে? সারা বছর খাবই বা কী?’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে শেরপুর জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার হেক্টর জমিতে করা হয়েছে বেগুনের আবাদ। বেশির ভাগ বেগুন চাষ হয় চরাঞ্চলে। এসব জমিতে বেগুন চাষ করে শেরপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে বেগুনের দাম ভালো থাকলেও বর্তমানে দাম একেবারে কমে গেছে। পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে ৩০০-৪০০ টাকা মণ দরে বেগুন ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তাদের দাবি, দাম কমপক্ষে ৮০০ টাকা হলে পোষাত। এ অবস্থায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
৭ নম্বর চরের বেগুন চাষি মুকুল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জিনিস কিনতে যাই, সেটার দাম বেশি। আর যখন বেচবার যাই তখন দাম কম। তাহলে আমরা বাঁচব কিভাবে?’
চরশেরপুরের মাইনুল হোসেন বলেন, ‘বেগুন উৎপাদনে মণপ্রতি ৭০০ টাকার মতো খরচ হয়। বেচতাছি ৩০০ সাড়ে ৩০০ টাকা মণ। তাইলে এখন আমরা কী করে সংসার চালামু। বেগুনের দাম নাই। তাই টাল আর করমু না। টাল ভাইঙ্গা ফালাইতাছি।’
এদিকে পাইকাররা জানান, সারা দেশে বেগুনের দাম কমে যাওয়ায় তারাও কমদামে বেগুন ক্রয় করছে। এতে তাদের কিছু করার নেই।
কারওয়ান বাজারের পাইকার নাজমুল বলেন, ‘আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ৩০০-৪০০ টাকা মণ দরে বেগুন কিনি। ক্ষেত থেকে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে বাজারে আনতে হয়। সেখান থেকে ট্রাকে করে শহরে নিতে খরচ হয় আরও। ঢাকায় এনে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করি। এখন বাজার কম তাই আমরাও কম দামেই কিনি।’
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক কৃষিবিদ শুকল্প দাস জানান, ‘শুরুর দিকে বেগুনচাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। এখন সারা দেশের বেগুন বাজারে আসছে। সে কারণে বেগুনের দাম কমে এসেছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। এ জন্য কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে সরাসরি কৃষকদের মাধ্যমেই বেগুন বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার কথা ভাবছি আমরা। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি ভাবেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’