ময়মনসিংহের নান্দাইলের রাজগাতী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজারের পাশে নরসুন্দা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতুটি। তবে সাত কোটি টাকার সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় এটি স্থানীয়দের কোনো উপকারে আসছে না। সেতুর কাজ শেষ হওয়ার তিন মাস পর সড়কের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এলজিইডি বলছে, সংযোগ সড়কের জন্য কৃষকরা বিনামূল্যে জমি দিতে চেয়েছিলেন। তবে কৃষকরা বলছেন, এ ধরনের কোনো কথা এলজিইডির সঙ্গে তাদের হয়নি।
সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত লোকজন সেতু দিয়ে চলাচল করছেন। তবে তাদের সেতুতে উঠতে আর নামতে হচ্ছে দুই পাশে লাগানো বাঁশের তৈরি মই দিয়ে। সেতুটি দিয়ে ছোট কোনো যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ১২টি গ্রামের হাজারও মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, সেতু না থাকায় এই স্থানে শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষায় নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে হতো। এতে বেশ কয়েকবার নৌকাডুবিসহ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এখন সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় মুরশেদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নবনির্মিত সেতুটি নিয়ে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু সেতু তৈরির আগে কিংবা পরে সংযোগ সড়ক হবে না এটি ভাবিনি। এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের ভোগান্তি একটুও কমেনি। এমন সেতু নির্মাণ করার চেয়ে না করাই ভালো।’
জাহিদ নামে একজন যুবক বলেন, সেতুর পশ্চিম পাশে রয়েছে কয়েকটি গ্রামের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র কালীগঞ্জ বাজার। সেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাজার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক এবং এক কিলোমিটার দূরে মুশুলি রেলওয়ে স্টেশন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল এলাকাবাসী।
তিনি বলেন, নবনির্মিত সেতুতে বাঁশের মই বেয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্যিএটি বিপদজনক। ইতোমধ্যে পা পিছলে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন।
জহির উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের সময় আইলে (এলে) বহু চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী ভোট চায়। তহন (তখন) পাশ করলে নানা ধরনের সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেয় তারা। এহন (এখন) নির্বাচন নাই, তারাও নাই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছে করলেই আমাদের সুবিধার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু তারা বাড়িত বয়্যা বয়্যা (বসে বসে) ঘুমায়তাছে। আমাদের দুর্ভোগের খবর নেয় না।’
বিনামূল্যে জমি দেয়ার কথা অস্বীকার করেন ছালেম মিয়া নামে একজন কৃষক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর সঙ্গে চার-পাঁচজনের জমি রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের আগে কৃষকরা মনে করেছিল জমি অধিগ্রহণ করেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। কিন্তু এলজিইডি জমি অধিগ্রহণের আগেই সেতু নির্মাণ করে। ফলে সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুর সঙ্গে বাঁশের মই লাগিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা।’
সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মো. আবদুল গণি ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে জানান, নরসুন্দার নৌপথ ব্যবহার করে সিলেটের তাহিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌযানে করে তারের ঘাট বন্দরে পাথর আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। নৌপথ টিকিয়ে রাখার জন্য সড়ক থেকে সেতুটির দুই প্রান্তে ১০ ফুটের বেশি উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে কোনো কারচুপি হয়নি। যথাযথভাবে নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নান্দাইল উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. শাহাবো রহমান বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হলে সেতুর দুই পাশ থেকে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এরই মধ্যে অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর এখন সংযোগ সড়কের প্রস্তাব কেন জানতে চাইলে এলজিইডির নান্দাইল উপজেলা কার্যালয়ের উপ সহকারী প্রকৌশলী ইন্দু ভূষণ বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২০ সালের শুরুতে ৯৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রশস্তের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। নির্মাণের আগে সড়কের জন্য কিছু কৃষক বিনামূল্যে জমি দিতে রাজি হলেও এখন জমির দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় বিনামূল্যে দিতে চাইছেন না। তাই জমি অধিগ্রহণের জন্য এখন অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সড়ক নির্মাণ সম্ভব হবে।’