দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর। এ জেলার চারপাশ নদীবেষ্টিত। সরকারি নিবন্ধিত তথ্যে পিরোজপুর জেলায় নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা বহন করে প্রায় ২৮ হাজার জেলে।
শুরু হয়েছে শীত মৌসুম। পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরের নিকটে ও কচা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা শুঁটকিপল্লীতে এই মৌসুমে ব্যস্ততা বাড়ে ডেলা, ফ্যাপসা, ছুরি, লইট্যা, চাপিলা, কমোটসহ ৩৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকীকরণের কাজে।
নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। এই পল্লীতে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি হওয়ায় সুনাম ও চাহিদা রয়েছে ব্যাপক হারে।
জানা যায়, পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরের আড়ত থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে এনে লবণ পানিতে ১ দিন ভিজিয়ে রাখেন। এরপর বাঁশের তৈরি মাচা ও বেড়ায় মাছ শুকাতে দেন।
৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কাঁচা মাছ শুঁটকিতে পরিণত হয়। এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে।
শুঁটকিপল্লীতে ১২ বছর ধরে কাজ করে আসছেন আবুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাগো শুঁটকিপল্লীতে প্রায় দেড় যুগ ধরে তৈরি হচ্ছে ডেলা, ফ্যাপসা, ছুরি, লইট্যা, চাপিলাসহ ৩৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি। এখানকার শুঁটকি বিষমুক্ত হওয়ায় এর চাহিদা দেশে তো রয়েছেই, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যায়।’
আরেক শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই পল্লীতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। সারা দিন কাজ করলে ৫ থেকে ৬ শ টাকা মজুরি পাই। তা দিয়ে আমাদের সংসার চলছে। এখানে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক কাজ করে।’
শুটকি ব্যবসায়ী মহাসিন বলেন, ‘এ খাতে রয়েছে নানা সমস্যা। সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। অন্যের কাছ থেকে জমি ভাড়া করে আমাদের এই ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে। আমরা চাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি শুঁটকিপল্লীর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল বারী বলেন, ‘পিরোজপুরের পাড়েরহাট ও চিথিলিয়া গ্রামে শীত মৌসমে ৯-১০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই পল্লীতে কাজ করে সংসার চলে অর্ধশত শ্রমিকের।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুটকি ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। তাদের সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানানো হবে।’