রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পিছিয়ে থাকার কথা আগে থেকে জানতেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, তারা সেখানে এগিয়ে যাওয়ার জোর চেষ্টাও করেননি। আর সেখানে যা হয়েছে, সেটির প্রভাব সংসদ নির্বাচনে পড়বে না। আসল খেলা হবে জাতীয় নির্বাচনে।
সর্ব উত্তরের মহানগরে দলের অনৈক্য ছিল বলেও জানান কাদের। বলছেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যে বড় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ভোটে প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ না পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জামানত হারানো আর ভোটে চতুর্থ হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন কাদের।
মঙ্গলবারের এই ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে।
নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া চতুর্থ হয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়। দ্বিতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল। তিনি ভোট পেয়েছন ৪৯ হাজার ৮৯২টি।
রংপুরে দলের ভরাডুবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। আমরা রংপুরের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে বড় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি রংপুরের ক্ষেত্রে।’
তবে রংপুরের নির্বাচন নিয়ে দল সিরিয়াস ছিল না বলেও দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। আমাদের ভেতরেও সমস্যা ছিল। আমরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাইনি। আমরা জানি, জাতীয় পার্টি এগিয়ে ছিল। আমরা এগিয়ে যাওয়ার জোর করে চেষ্টা করিনি।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুর্বল জেনেও তাকে বেছে নেয়ার কথাও জানান কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি দুর্বল, তার পরও নারী প্রার্থী দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘হেরে যাওয়ার রিস্ক জেনেও অনেককে মনোনয়ন দিয়েছি। একটা নারীকে দিয়ে দেখলাম রি-অ্যাকশন কী। আওয়ামী লীগে এগোচ্ছে, নারীদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করছি, যেকোনো নির্বাচনে তাদের এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ। অনেক পুরুষ নেতা তাদের মেনে নিতে চান না। সে কারণে রংপুরে অনেকে এগিয়ে আসেনি।’
প্রার্থী বাছাইয়ে সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল- এমন দাবি করে কাদের বলেন, ‘তার কোনো বদনাম নেই। তিনি প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। মানুষ হিসেবে তার সুনাম অনেক। নারীকে দিলে তাকে যেন ভোট দেয়, সেই মানসিকতা তৈরি করুন। দলে ও বাইরে একি সুর, তাহলে কি নারীরা বের হবে না?’
তিনি বলেন, ‘খেলা হবে জাতীয় নির্বাচনে। যা বলেছি ১১ বছরে তাই করেছি। রংপুর এরশাদ সাহেবের প্রভাবিত। মোস্তফা ব্যক্তিগতভাবে পপুলার। আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। দুর্বলতা যেটি সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
৩০ ডিসেম্বর সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ
বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডাকা মিছিলের দিন শুক্রবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলেও জানান কাদের।
তিনি বলেন, ‘১০ তারিখের মতো আমরা সারা দেশে সতর্ক পাহারায় থাকব। ওই দিন যেমন ছিলাম একই অবস্থানে থাকব।’
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন রাজধানীর অলিগলিতেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল। তারা এলাকায় এলাকায় ছোট ছোট মিছিল করেছেন, জমায়েত করে বক্তব্য দিয়েছেন।
১০ ডিসেম্বরের সেই কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় বিএনপির সমাবেশ।
সেই সমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে প্রথমে ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে মিছিলের ডাক দেয়। ঢাকা ছাড়া অন্য শহরে সে কর্মসূচি পালনও হয়েছে। তবে ঢাকায় সেদিন আওয়ামী লীগের ২২ জন জাতীয় সম্মেলন হবে, সেই ঘোষণা আসে গত ২৮ অক্টোবর।
বিএনপি পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে- ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করে। সেদিন নয়াপল্টন থেকে মগবাজার পর্যন্ত মিছিল করার এই অনুমতি পেয়েছে দলটি।
বিএনপির মিছিলের দিন আওয়ামী লীগ কেন সতর্ক থাকবে- এই প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি গণমিছিলের নামে সহিংসতা করবে। আমরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব? আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব।’