বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাত বছর দুর্ভোগ শেষে হাসছে মিরপুর

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:০২

দুর্ভোগের দিন এখন অতীত বলে মনে করেন মিরপুরবাসী রাশেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এই দুর্ভোগ সহ্য করেছি বলেই দেশে নতুন প্রযুক্তির সূচনা হতে যাচ্ছে। যার সুফল ক্রমেই পুরো শহরবাসী পাবে। আমরা আজ মেট্রোর জন্য গর্বিত।’

বছরখানেক আগের কথা। প্রসাধনী ছাড়া ফর্সা হওয়ার টোটকা হিসেবে বলা হতো মিরপুর ঘুরতে যেতে। ধূলায় ধূসর হওয়ার ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। নানা ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলা হতো মিরপুরকে কেন্দ্র করে। ফেসবুকে এমন অনেক ট্রোল ভাইরালও হয়েছে।

সময় এখন বদলে গেছে। বুধবার থেকে ছুটবে স্বপ্নের মেট্রারেল। এই প্রকল্পটিকে বাস্তব রূপ দিতে সাত বছর ধরে দুর্ভোগকে সঙ্গী করেছে মিরপুরের মানুষ। নিরবতা ভেঙে সরবও হয়েছে এখানকার বাসিন্দারা।

সিটি কলেজে যাওয়ার দিন থেকে শুরু হওয়া দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে রাশেদ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাই তো বেশ উচ্চকিত হয়ে ট্রোলের জবাব দিলেন তিনি।

রাশেদ বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে যে দুর্ভোগ হয়েছে, এ জন্য আমাদের নিয়ে কম ট্রোল করা হয়নি। বন্ধুরা টিপ্পনি কাটত। বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের সহ্য করতে হয়েছে।’

সেসব দিন এখন অতীত বলে মনে করেন রাশেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এই দুর্ভোগ সহ্য করেছি বলেই দেশে নতুন প্রযুক্তির সূচনা হতে যাচ্ছে। যার সুফল ক্রমেই পুরো শহরবাসী পাবে। আমরা আজ মেট্রোর জন্য গর্বিত।’

২০১৫ সাল থেকে গ্যাস, পানিসহ অন্যান্য সার্ভিস লাইন সরানো দিয়ে গোটা মিরপুর জুড়ে শুরু হয় সড়ক খোঁড়াখুড়ির কাজ। সেটা গুছিয়ে আসতে না আসতেই শুরু হয় মেট্রো রেলের পিলার তৈরি ও স্টেশন নির্মাণ।

নির্মাণ কাজের ধূলা, রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একপাশের রাস্তা একবারের বন্ধ হয়ে যাওয়া, বর্ষায় জলাবদ্ধতা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস বা অন্যান্য বাহনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছানো – এসবই ছিল মিরপুরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী।

মেট্রোরেলের পিলার তৈরির কাজ যতোটা এগিয়েছে, ক্রমেই কেটেছে দুর্ভোগের সময়। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে উন্নয়নের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়ে হাসি ফুটতে শুরু করেছে মিরপুরের বাসিন্দাদের মুখে।

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ খাতে যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা।

মেট্রোরেলে যাত্রী সেবা নিতে অপেক্ষাটা আরেকটু বেশি। উদ্বোধনের পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে যাত্রী পারাপার।

শুরুতে মেট্রোরেলের সেবাকে সীমিত রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চলাচল করবে এটি। তবে নগরবাসীর আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেট্রোরেলও পেয়ে যাবে তার স্বভাবিক গতি। ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা গতিশীল হওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিপুল ইতিবাচক প্রভাব রাখবে এই মেট্রোরেল।

মিরপুর-১১ এর বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অফিস পল্টনে। অফিস সময়ে এই পুরো রাস্তাটা ধরে যাওয়া আসা কতটা যে দুর্ভোগের, তা শুধু আমরাই জানি। যানজট, ধূলা, জলবদ্ধতা নিয়ে আমাদের বছরগুলো কেটেছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে, কবে কাজ শেষ হবে, কবে মুক্তি পাব। সেই কাঙ্ক্ষিত দিন এসেছে।’

কোনো যানজট থাকবে না, মেট্রোরেল ছুটবে তার নিজস্ব গতিতে—এই বিষয়টি ভেবেই আনন্দ পাচ্ছেন মাজহার।

তিনি বলেন, ‘মেট্রোর নিচের রাস্তাও সুন্দর হয়েছে। নিচ দিয়ে চলাচলও এখন শান্তি হয়েছে। বড় কোনো যানজট ছাড়াই এখন যাতায়াত করা যাচ্ছে। এই দিনটার জন্যই আমরা অপেক্ষায় ছিলাম।’

যানজটে শুধু সময় নষ্ট নয়, ক্ষতি হয়েছে মিরপুর সড়কের দুই ধারের ব্যবসায়ীদের। বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয়েছে তাদের ব্যবসা।

২০১২ সালে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকে শেওড়াপাড়ায় মোটরসাইকেলের খুচরা যন্ত্রপাতির দোকান খুলে বসেছিলেন সাইফুল ইসলাম। সময়ের সঙ্গে ব্যবসার পরিধিও বেড়েছিল তার। কিন্তু মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞ তাকে অনেক বেকায়দায় ফেলে দেয়। সেই আক্ষেপ রয়ে গেছে। কিন্তু দুর্বার গতি মেট্রোরেল যে নগরবাসীকে যাতায়াতে নতুন গতি দেবে সেটাতে স্বস্তিও পাচ্ছেন এই উদ্যোক্তা।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রোর কাজ শুরুর পর আমার বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। কাস্টমাররা আসতে চায় না। বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পার্টস সেল করা শুরু করি। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। দোকান ভাড়া, কর্মচারিদের বেতন, অন্যান্য খরচ মিলিয়ে হিসেব মেলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। এখন কয়েক মাস ধরে আবার কাস্টমার আসা শুরু হয়েছে। কারণ মেট্রোর নিচের রাস্তা ক্লিয়ার হয়েছে।’

মিরপুরে ১১ নম্বরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ছিল কামরুল হাসানের। তিনি বলেন, ‘নির্মাণকাজের ধুলাবালির কারণে ক্রমেই আমাদের কাস্টমার কমে আসে। আমি দুই বছর লস দিয়ে চালালেও আর কুলিয়ে উঠতে না পেরে ২০১৯ সালে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।’

নিজের এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ি করেন কামরুল। তবে সেই অভিমান এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘নিজের লস হলেও এখন এই ভেবে ভাল লাগে যে, সব কিছু আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। রাস্তা-ঘাট সুন্দর হয়েছে। মেট্রোর কারণে আমাদের যোগাযোগের একটা বিপ্লব হতে যাচ্ছে।’

তবে মিরপুরবাসীর ভোগান্তি ঢাকা শহরের আর কারও হোক সেটা চান না এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘আশা করব, শহরের অন্য প্রান্তে যখন মেট্রোর কাজ হবে তখন যেন এইসব দুর্ভোগগুলো কমাতে যথাযথ ম্যানেজমেন্ট করা হয়। তাহলে আর আমাদের মতো বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।’

সব দুর্ভোগ শেষে বুধবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এই দিনেই বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে আধুনিক বৈদ্যুতিক গণপরিবহনে। বিগত ৫ বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষে এই মাহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছাতে প্রয়োজন হয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিক-প্রকৌশলীর নিরলস পরিশ্রম।

এ বিভাগের আরো খবর