বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সহযোগী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম বলেছেন আন্তজেলা ডাকাত দলের প্রধান।
নাঈম দেওয়ানের অভিযোগ, ডাকাতির ভাগ দিতে হয় ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতাদের, যাদের মধ্যে দুজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন।
যে নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে, তারা সেটি অস্বীকার করে দাবি করেছেন, মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে বিরোধ আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
থানায় সাংবাদিকদের সামনে পুলিশের কাছে দেয়া নাঈম দেওয়ানের বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়ে বরিশালে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
কী আছে ভিডিওতে
বরিশালের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় বছরজুড়েই হয় ডাকাতি। সম্প্রতি ডাকাতদের ধরতে বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গ্রেপ্তার হন আন্তজেলা ডাকাত দলের ছয় সদস্য। এদের দেয়া তথ্যে ৭ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন ওই দলের প্রধান নাঈম দেওয়ান।
পুলিশ জানিয়েছে, মেহেন্দিগঞ্জের দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নাঈমের নামে বরিশালের বিভিন্ন থানায় হত্যা ও ডাকাতির ১৪টি মামলা আছে।
নাঈমকে আটকের পর মেহেন্দিগঞ্জে যান বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন। তার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয় নাঈমকে।
সে সময় নানা প্রশ্নের উত্তরে ডাকাতির সহযোগী হিসেবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পাঁচজন নেতার নাম বলেন নাঈম।
ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশকে নাঈম বলছেন, এসব নেতাকে নিয়মিত ডাকাতির ভাগ দেয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে টাকা দিতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে কী বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা
ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদের তিনজন হলেন দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী সালাম দেওয়ান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শহীদ দেওয়ান এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের আরেক পক্ষের সমর্থক মোশাররফ আকন।
নাঈমের দেয়া স্বীকারোক্তিতে বাচ্চু ও কাশেম দেওয়ান নামে আরও দুজনের নাম এসেছে, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হলেও কোনো পদে নেই।
ডাকাত দলপ্রধানের অভিযোগের বিষয়ে সালাম দেওয়ান বলেন, ‘আমি এমপির গ্রুপের লোক বলে আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। তা ছাড়া থানার ওসির সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে একবার সাক্ষী দিয়েছিলাম। এর প্রতিশোধ হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
‘ভালো করে ভিডিওটি দেখলে দেখবেন যে, নাঈম একবারও আমার নাম বলেনি। ওসি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে আমার নাম বলেছে।’
মেহেন্দিগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি সদস্য শহীদ দেওয়ান বলেন, ‘এটা সবার জানা যে, এখানে আওয়ামী লীগে দুই গ্রুপ। স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথ এবং জেলা। জেলা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। আমি এমপি গ্রুপের বলে ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি।
‘এই উপজেলায় আমি বহু চোর-ডাকাত ধরে থানায় দিয়েছি। আর আজ আমাকে বলা হচ্ছে ডাকাতের গডফাদার। এসবই মিথ্যা; বরং নাঈম জেলা আওয়ামী লীগের যেসব নেতার নাম বলেছে, তারা এসবের সঙ্গে জড়িত।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মোশাররফ আকন বলেন, ‘গ্রেপ্তার নাঈম দেওয়ান শহীদ দেওয়ানের ভাতিজা। আমার বংশের সবার ব্যাপারে খোঁজ নিন। দেখুন আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ কোনো অপকর্মের সঙ্গে আছে কি না।
‘এই শহীদ দেওয়ানসহ এমপি গ্রুপের যারা আছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। শহীদ দেওয়ানের পরিবারে এমন অনেকে আছে, যারা ডাকাতিসহ নানা অপরাধে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়েছে। কিছুদিন আগে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অহিদ দেওয়ানও এই শহীদ দেওয়ানের ভাই।’
পুলিশের ভাষ্য
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ডাকাত নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়নি। রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। রিমান্ডে পাওয়া গেলে অভিযোগ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।’
বিরোধের কারণে নাম জড়ানোর অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের আইনকানুন এতটা দুর্বল নয় যে চাইলেই কাউকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো যাবে। যারা এসব বলছেন, তারা না বুঝে বলছেন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’