বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনটি ছিল সামিয়া-জান্নাতদের

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:৫৩

এবারই প্রথম নিজেদের আবাস ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে সবাই মিলে আনন্দ করে শিশু পরিবারের সদস্যরা। সকালে সবাই বাসে চড়ে কুমিল্লা নগরীর ডুলিপাড়ায় অবস্থিত ফান টাউনে যায়।

সামিয়া আক্তারের বাবা মারা গেছেন ছোটবেলায়। বাবার স্মৃতি মনে নেই তার। দাদির কাছে রেখে মাও বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। বাবা-মা ছাড়াই শৈশব পার করা সামিয়া দাদির কাছেই বড় হতে থাকে। তবে দাদির সামর্থ্য নেই নাতনিকে লেখাপড়া শেখানোর, জামাকাপড় ও খাবার ব্যবস্থা করার। তাই বছর দেড়েক ধরে কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ সরকারি শিশু পরিবারে থাকে সামিয়া। সুদূর তিতাস উপজেলার নারায়ণপুর থেকে এসে নাতনিকে দেখে যান দাদি।

চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া জান্নাতের বাড়ি কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জান্নাত চতুর্থ। বাবা মারা গেছেন। সেই স্মৃতি মনে নেই জান্নাতের। অভাবের সংসার তাদের। তাই মা সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে যান জান্নাতকে। ৪ বছর ধরে জান্নাত শিশু পরিবারে আছে।

কুমিল্লা নগরীর সংরাইশে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবারের কন্যাদের গল্পগুলো এমনই। কারও বাবা নেই, কারও নেই মা। কারও বাবা-মা কেউ নেই। সরকার থেকে তাদের লেখাপড়া ও জামাকাপড়ের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা দিয়ে দিন কাটে তাদের।

তবে গত এক যুগের মধ্যে এবারই প্রথম নিজেদের আবাস ছেড়ে বাইরে গিয়ে পিকনিক করেছে ওই শিশু পরিবারের সদস্যরা। সকালে সবাই বাসে চড়ে কুমিল্লা নগরীর ডুলিপাড়ায় অবস্থিত ফান টাউনে যায়।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পার্কের ভেতর শিশুরা ডামি ট্রেন ও বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। মোরগ-পোলাও দিয়ে দুপুরের খাবার সেরেছে। তার আগে কেক কেটে আনন্দ করে ছবি তুলেছে তারা। দোলনায় চড়েও আনন্দ পেয়েছে শিশুরা।

তাই সোমবার দিনটি ছিল তাদের কাছে স্মরণীয়। দিনটি ছিল সামিয়া-জান্নাতদের।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া শারমিন আক্তার বলে, ‘এটা আমার জীবনের প্রথম পিকনিক। আমি খুব মজা করেছি। আমি দুইবার ঘোড়া চড়েছি।’

পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া হাবিবা আক্তার বলে, ‘আমি দুইবার ট্রেন চড়েছি। অনেক মজার মজার খাবার খেয়েছি। পিকনিকে এসে অকে মজা করেছি।’

কুমিল্লা সংরাইশ শিশু পরিবারের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট শরফুন্নাহার মনি বলেন, ‘সংরাইশ সরকারি শিশু (বালিকা) পরিবারে ৭৬ জন শিশু রয়েছে। তারা সবাই কন্যাসন্তান। সরকার থেকে বরাদ্দ করা আছে খাবার, পোশাক ও লেখাপড়ার খরচ। পিকনিকের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও শিশুদের বছরে একবার পিকনিকে নেয়া সম্ভব না।

'সোমবার তাদের জন্য পিকনিকের ব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতা। এই আয়োজনে বাচ্চারা খুবই খুশি। তাদের আনন্দ দেখে বোঝার উপায় নেই এই শিশুদের বাবা-মা নেই। আমি শিশুদের আনন্দে আপ্লুত হয়েছি।’

শিশু পরিবারের সদস্যদের জন্য পিকনিকের আয়োজন করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, ‌‘২০১৬ সালে জাগ্রত মানবিকতা আর্তমানবতার সেবায় পথচলা শুরু করে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তের সংগ্রহ করা হতো। ধীরে ধীরে সংগঠনটি রক্ত সংগ্রহ, অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

'সোমবার ছিল আমাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী। এ উপলক্ষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে অসহায় ও সামাজিক সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে পিকনিক করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুদের নিয়ে আসি ফান টাউন পার্কে। এখানে কেক কাটার পর রাইড চড়ে আনন্দ পেয়েছে শিশুরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও কুমিল্লা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মেহেরুন্নেচ্ছা বাহার উপস্থিত থেকে শিশুদের সঙ্গে কেক কাটেন। মুহূর্তগুলো আমার কাছে ঐশ্বরিক বিষয় মনে হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর