বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাম দলগুলোর কর্মসূচি দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, এতিমের টাকা আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের নেতৃত্ব বামরা কীভাবে মানল, এই প্রশ্ন তার।
বিজয় দিবস উদযাপনে রোববার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়া কিছু বাম সংগঠনের নেতাদেরকে ইঙ্গিত করে এই প্রশ্ন তুললেন সরকারপ্রধান।
প্রায় দুই যুগের জোট বাদ দিয়ে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবার যুগপৎ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি যেদিন যে ধরনের কর্মসূচি পালন করবে, একই দিন একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে অন্য দলগুলো।
এই ধরনের আন্দোলনে বিএনপির অকার্যকর করে দেয়া জোট ২০ দলের শরিকরা যেমন একমত হয়েছেন, তেমনি একমত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে ছোট ছোট কয়েকটি দলের জোটও। এই জোটে যেসব দল আছে তার মধ্যে তিনটি আছে বামপন্থি। এগুলো হলো: আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন এবং সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঘোষণা করা ১০ দফা দাবি আদায়ে এক দফা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর যে মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে, তাতে জামায়াত ছাড়াও বিএনপির সাবেক জোট ২০ দলের ১১ শরিক সমর্থন জানিয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চও সেদিন ঢাকায় মিছিল নিয়ে নামতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা এসেছে। বিএনপির সঙ্গে একই ধারায় কর্মসূচি পালনে দলগুলো লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় বামপন্থি আর কোথায় ডানপন্থি! যারা বামপন্থি তারা ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। বাম, স্বল্পবাম ও অতিবাম সবাই এখন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে মিলে গেছে।
‘যারা এত বড় বড় কথা বলেন, এত বড় তাত্ত্বিক, তারা ওদের সঙ্গে এক হয়ে যায় কীভাবে? ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, এতিমের টাকা আত্মসাতের সাজাপ্রাপ্ত আসামির নেতৃত্বে বড় বড় তাত্ত্বিকরা এক হয়ে যায় কীভাবে? কোথায় গেলো তাদের আদর্শ? বিচিত্র সেলুকাস এদেশ!’
গত ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে দুই ঘণ্টার রাজনৈতিক সংলাপ শেষে ব্রিফ করছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা
পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কখনও এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আর সে জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, যাতে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। ধারাবাহিকতায় বারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। কখনও ভোট কারচুপি করে কখনও চক্রান্ত করে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘একাত্তরে তাদের সরকার পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও তাদের জনগণ আমাদের পক্ষে ছিল। আমাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা পরে তাদের সম্মানিত করেছি। আমাদের সহযোগিতা করলে যেমন সম্মান জানাই, আবার আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তার প্রতিবাদও করতে জানি।’
তিনি বলেন, ‘যারা মনে করে, বাঁশিতে ফুঁ দিল, আর দেশে স্বাধীন হয়ে গেল, এদের আসলে ভূ-গোল ও ইতিহাসের জ্ঞান আছে কি না, সন্দেহ আছে।
‘একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। একটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল জাতির পিতার নেতৃত্বে। এ বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, কীভাবে দেশটা সাজাবেন, প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত করবেন, এ জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।’
জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে কিছু বেইমান-মোনাফেক ছিল, যারা আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করত। আমার মায়ের হাতে কত খাবার খেয়েছে, বাবা তাদের সন্তানের মত ভালোবাসতেন! সেই তারাই তাকে হত্যা করল।
‘কিন্তু তারপর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এদেশকে কী দিয়েছে? পঁচাত্তরের পর এদেশের মানুষ শোষণের শিকার হয়েছে। ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এদেশের মানুষ কী পেয়েছে? শোষণ বঞ্চনা আর নিদারুণ কষ্ট।
‘তারা চেয়েছে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। একটা উন্নত রাষ্ট্রের ভিত তৈরি করছিলেন।’
‘সরকার উৎখাত এতই সহজ?’
বিএনপি যে সরকার উৎখাতের কথা বলছে, সেটি সহজ কাজ নয়, তাও জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা আসলো আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবে। এতই সোজা?’
পাকিস্তান আমল থেকে আন্দোলনে সাফল্য আওয়ামী লীগই দেখিয়েছে, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘আইয়ুব খানকে আমরা উৎখাত করেছি, ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি, জিয়াকে পাই নাই হাতে, কিন্তু জিয়া যখনই যেখানে গেছে, আন্দোলন তো তার বিরুদ্ধে হয়েছে।
‘এরশাদকে উৎখাত করেছি, খালেদা জিয়া (১৯৯৬ সাল) ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি, তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আবার ২০০৬ এ ভোট চুরি করেছিল, ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার দিকে ভোট করতে চেয়েছিল, সেটাও বাতিল হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে... হ্যাঁ চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে।’
আলোচনা সভায় স্বাগত ভাষণ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদও এ সময় বক্তব্য দেন।
সভা সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম