রাজধানীর গুলশান পুলিশ প্লাজা মার্কেটের পেছনের অংশকে হাতিরঝিল পার্ক বা গোল চত্ত্বর বলে লোকে। ছুটির দিনগুলো সহ প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে এই অংশে ভিড় করে সাধারণ মানুষ।
তবে বিজয়ের দিনটিতে পার্কের পুরোটাই যেন ছেয়ে গেছে লাল সবুজে ছেয়ে। বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি একইদিনে হওয়ায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না কোথাও।
শুক্রবার ৫১ তম বিজয় দিবসে রাজধানীর আধুনিক এই যোগাযোগ স্থাপনা ঘুরে দেখা যায়, উৎসবমুখর বর্ণিল আয়োজনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
বন্ধুকে নিয়ে মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে ঘুরতে আসা আলম ইসলাম বলেন, ‘আজ শুক্রবার। আমার অফিস ছুটি। সাধারণ শুক্রবার হলে বাসায় থাকা হতো। তবে আজকের দিনটি ভিন্ন। এদিন বের না হলে মনের মধ্যে কষ্ট থেকে যায়। দুপুরের পর থেকেই তাই ঘুরছি। এটাই আমাদের বিজয় উদযাপন।’
হাতিরঝিলের মহানগর অংশ থেকে রামপুরা অংশ ঘুরে দেখা যায়, দুই পাশের সংযোগ সেতুগুলোর পার্শ্ব রাস্তায় লাল-সবুজ রঙের জামা, পাঞ্জাবি পরে ভিড় করেছেন কিশোর বয়সের ছেলে মেয়েরা। কেউবা আছেন পরিবারের সঙ্গে। তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করায়। কেউবা ওয়াটার বোট বা নৌকা ভ্রমণ করে ঝিলের বাড়তি আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত।
এদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে বন্ধ রয়েছে যাত্রী পারাপার। চালু হয়েছে পুরো হাতিরঝিল লেক ঘুরে দেখার আয়োজন। প্রতি ত্রিশ মিনিটের জন্য জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে ৮০ টাকা।
এ ছাড়া, হাতিরঝিলের এমফিথিয়েটারে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে বিজয় উৎসব। চ্যানেল আই ও গানবাংলার যৌথ উদ্যোগে তারকাবহুল হবে এ আয়োজন।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা মালিবাগের বাসিন্দা কায়কোবাদ হাসান বলেন, ‘শুক্রবার আর বিজয় দিবস একসঙ্গে পড়েছে। তাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চারা হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে বেশ আনন্দ উপভোগ করছে।’
তবে লেকের পানি নিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা পানির পচা গন্ধে বিরক্ত হয়েছে। পানিটা যদি দুর্গন্ধময় না হতো, পরিষ্কার হতো তাহলে সবাই আরও বেশি আনন্দ পেত।’
নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ ঝিলের দুইপাশেই। সবগুলো স্পটেই মানুষের ভিড়। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরছেন। অনেকে আবার দল বেঁধেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
গুদারাঘাট লেকপাড়ের গোল চত্বরে বেলুন, ফুচকা, ছোট-বড় দোকানে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলোতে চলছে জোর বিক্রি। জনপ্রিয় ভারতীয় খাবার দোসা, চিকেন, কাবাব কম দামে প্যাকেজ আকারে বিক্রি হচ্ছে এখানে।
৯ মাসের সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বহু আকাঙ্ক্ষিত এই দিনটি। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৫০ বছর আগের এই দিনে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাতি দিবসটি পালন করছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ শুরু হয়। কুচকাওয়াজে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেন। সকালে সাভারে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানায় জাতি-বর্ণ-ধর্ম সবাই।